ভিড়ের মধ্যেই যাতায়াত। নিজস্ব চিত্র।
চলতি মাসের ৬ তারিখ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল একদিনে ২৬। সাত দিনের মাথায়, ১৩ তারিখ একদিনে আক্রান্ত হলেন ৫৯ জন!
বসিরহাট মহকুমায় যে হারে করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাতে পুজোর পরে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, তা ভেবে চিন্তিত জেলা স্বাস্থ্য দফতর। মহকুমার একটি মাত্র কোভিড হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা ৩০টি। সেগুলির প্রায় বেশিরভাগ ইদানীং রোজই ভর্তি থাকছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। আপাতত মহকুমায় ৬টি সেফ হোম থাকলেও কোভিড হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা এত দিনেও না বাড়ানোয় ক্ষোভ আছে বাসিন্দাদের। আর একটি কোভিড হাসপাতাল তৈরির দাবি ছিল, যা নিয়ে রাজনৈতিক দলের মিটিং-মিছিলও কম হয়নি। কিন্ত সে দাবিও মেটেনি এখনও।
এ দিকে, রাজনৈতিক দলগুলির মিছিল-মিটিং অব্যাহত। পুজোর কেনাকাটা সারতেও ভিড় করছেন মানুষ। মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে না অনেককে। পথেঘাটে, ব্যাঙ্কের লাইনে, চায়ের দোকানে শারীরিক দূরত্ববিধিও মানছেন না বহু মানুষ।
ইতিমধ্যে বসিরহাটের দশটি ব্লকে দু’শোর বেশি চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ১১টি থানার ওসি, এসআই, পুলিশ এবং সিভিক ভলান্টিয়ার মিলে ৬০ জনেরও বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এই অবস্থায় থানার কাজ সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ।
বসিরহাট স্বাস্থ্যজেলার আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত বসিরহাট মহকুমায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫০৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩৯৫৯ জন। ৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৪৭,৯৯৯ জনের লালারস পরীক্ষা করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, এই মুহূর্তে সপ্তাহে প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে দৈনিক সংক্রমণের হার। যা উদ্বেগজনক। কোনও মতেই মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হওয়া চলবে না। দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সাবান দিয়ে বার বার হাত ধুতে হবে বলে পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।
বসিরহাট মহকুমায় ১০টি ব্লক এবং ৩টি পুরসভা। বসিরহাট জেলা স্বাস্থ্য দফতর বলছে, বসিরহাট পুরসভায় ৭৭২ জন, স্বরূপনগরে ৫৮৯, হাসনাবাদে ব্লকে ৪২৯, বাদুড়িয়ায় ৩৯০, টাকি পুর এলাকায় ৩১৯, হাড়োয়ায় ২১৭, মিনাখাঁয় ২৩৩, হিঙ্গলগঞ্জে ২৮১, সন্দেশখালি ২ ব্লকে ১৪৯ এবং সন্দেশখালি ১ ব্লকে ১২৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বসিরহাট জেলা এবং সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘আগে তিনজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখন দু’জন চিকিৎসক আক্রান্ত। এখনও পর্যন্ত হাসপাতাল দু’টিতে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থকর্মী-সহ ৪০ জনের মতো আক্রান্ত হয়েছেন।’’
বসিরহাট জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘এত মানুষের মৃত্যু, এত মানুষের আক্রান্ত হওয়ার পরেও রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে কোনও হেলদোল নেই। মিটিং-মিছিল চলছেই। পুজোর পরে কী যে হবে, ভাবতেই পারছি না!’’