প্রতীকী ছবি।
করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে তুলনায় নিরাপদ ছিল সুন্দরবনের গোসাবা ব্লক। দেশ জুড়ে যখন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল সংক্রমণ, তখন কার্যত এই ব্লকে সংক্রমণের হার ছিল শূন্য। টানা লকডাউনের ফলে এই ব্লক নিজেদের কার্যত এলাকাতেই বন্দি করে রেখেছিল। নদীবেষ্টিত হওয়ার ফলে বাইরে থেকে সংক্রমিত মানুষজন ঢুকতে পারেননি। ক্যানিং মহকুমার অন্যান্য ব্লকে করোনা সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বাড়লেও গোসাবা ব্লকে সে ভাবে প্রকোপ লক্ষ্য করা যায়নি।
কিন্তু পরিস্থিতি বদলাচ্ছে ক্রমশ। বর্তমানে ক্যানিং মহকুমায় সব থেকে বেশি পজ়িটিভ রোগীর সংখ্যা গোসাবা ব্লকেই। দু’মাস আগে গোসাবা ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল পঞ্চাশের আশেপাশে। অক্টোবরের মাঝামাঝি সেই সংখ্যাটা দুশোর আশেপাশে ছিল। কিন্তু গত একমাসে রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। গত একমাসে প্রায় সাড়ে চারশোজন আক্রান্ত হয়েছেন এই ব্লকে। গড়ে প্রতিদিন ১৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন এই দ্বীপাঞ্চলে। শনিবার পর্যন্ত গোসাবা ব্লকে আক্রান্তের সংখ্যা ৬২৭। যার মধ্যে ১৫৩ জন অ্যাক্টিভ রোগী। চিকিৎসার পরে ৪৭১ জন সুস্থ হলেও এখনও পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে এই ব্লকে। ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গোসাবা ব্লকের ছোটমোল্লাখালি, কুমিরমারি, বালি-সহ একাধিক পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প করে এই টেস্ট করা হচ্ছে। আর তাতেই ধরা পড়ছে সংক্রমণের সংখ্যা। গোসাবার বিএমওএইচ ইন্দ্রনীল বর্গী বলেন, ‘‘এই ব্লকের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ ক্যাম্প করে কোভিড টেস্ট করা হচ্ছে। যাঁদের শ্বাসকষ্টজনিত ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তাঁদের ক্যানিং কোভিড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হচ্ছে। যাঁদের সামান্য অসুবিধা রয়েছে, তাঁদের সেফ হোমে ও বাকি যাঁদের শরীরে কোনও উপসর্গ নেই, তাঁদের বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ মহকুমা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে ক্যানিং মহকুমায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৪৮২ জন। এঁদের মধ্যে ২১৫৬ জন চিকিৎসার পরে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েছেন। ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে এই মহকুমায়। বর্তমানে ৩০৬ জন পজ়িটিভ রোগী রয়েছেন মহকুমায়। ক্যানিং মহকুমা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মহকুমার মধ্যে এই মুহূর্তে গোসাবা ব্লকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে গোসাবায়। আমরা নজর রাখছি।’’ গোসাবার বিডিও সৌরভ মিত্রের কথায়, ‘‘গত কয়েক দিনে এই ব্লকে সংক্রমণ যথেষ্ট বেড়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’’ এ দিকে, দ্রুত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলায় আতঙ্কিত এলাকার মানুষজন। গোসাবার বাসিন্দা দুলাল সর্দার বলেন, ‘‘যে ভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, কী হবে বুঝতে পারছি না। প্রয়োজনে এই এলাকায় আবারও লকডাউন ঘোষণা করুক প্রশাসন।” একই বক্তব্য গোসাবার সুধীর গায়েন, সুব্রত মণ্ডলদের।
কেন হঠাৎ সংক্রমণ বাড়ছে, কী মনে করছেন চিকিৎসকেরা?
তাঁদের একটি অংশের মতে, লকডাউনে সমস্ত ফেরি যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এই ব্লকে বাইরে থেকে মানুষজন আসতে পারেননি। ফলে সেই সময়ে সংক্রমণ ছড়াতে পারেনি মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপাঞলে। তবে বর্তমানে সমস্ত কিছু খুলে যাওয়ায় রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন আসছেন। স্থানীয় মানুষও বাইরে যাতায়াত করছেন। সে কারণেই বাড়ছে সংক্রমণ।