প্রতীকী ছবি।
করোনার সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ের প্রভাব শিশু-কিশোরদের উপরে বেশি পড়তে পারে বলে চিকিৎসক-গবেষকদের আশঙ্কা। দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য আগাম পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল বলে কেন্দ্র-রাজ্য দুই সরকারই সমালোচনার মুখে পড়েছিল। সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখে তাই আগেভাগে পরিকাঠামো নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্ততি নিতে শুরু করেছে।
জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ঢেউয়ে অনেক শিশু আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েক মাসের শিশু বা দু’তিন বছরের শিশুরাও আছে। তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তাদের শারীরিক অবস্থার তেমন অবনতি হয়নি। কিন্তু তৃতীয় ঢেউয়ে কী হবে, তা পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে জেলার হাসপাতালগুলিতে শিশু-কিশোরদের চিকিৎসা পরিকাঠামো বাড়ানো-সহ কয়েকটি বিষয়ের উপরে আগেভাগে নজর দেওয়া প্রয়োজন। জেলায় শিশু-কিশোরদের চিকিৎসা পরিকাঠামো এখনও পর্যাপ্ত নয়।
জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃতীয় ঢেউয়ের আগে জেলার হাসপাতালগুলিতে শিশু-কিশোরদের কোভিড শয্যা বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। শিশুদের জন্য এনআইসিইউ তৈরিতে জোর দেওয়া হয়েছে। এসএনসিইউগুলিতে শয্যা বাড়ছে। পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। চিকিৎসকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আনা হচ্ছে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর।
জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘তৃতীয় ঢেউয়ের আগে শিশু-কিশোরদের চিকিৎসার জন্য পরিকাঠামো বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছে। অশোকনগর, হাবড়া, বারাসত-সহ কয়েকটি জায়গায় অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি হচ্ছে।’’
জেলা সদর বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘শিশুদের চিকিৎসার জন্য ইতিমধ্যেই পরিকাঠামো বাড়ানো হয়েছে।’’ হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, ১৩টি পেডিয়াট্রিক ভেন্টিলেটর, লাইফ সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট আনা হয়েছে। তা ছাড়া, হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসার জন্য এসএনসিইউ-এ ৪০টি শয্যা আছে।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের শিশুদের পরিকাঠামো বাড়ছে। হাসপাতাল সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘পেডিয়াট্রিক এইচডিইউ তৈরি করা হবে। ১০টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ইতিমধ্যেই চলে এসেছে। রয়েছে এসএনসিইউ।’’
বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের এনআইসিইউ নেই। ১০ শয্যার এসএনসিইউ আছে। প্রয়োজনে শয্যা বাড়ানো হবে। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা আছে।’’
হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার বিবেকানন্দ বিশ্বাস বলেন, ‘‘অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি করা হচ্ছে। এসএনসিইউ আছে, তবে তা কোভিড আক্রান্ত শিশুদের জন্য নয়। শিশুদের চিকিৎসা পরিকাঠামো বাড়ানো হচ্ছে।’’
পরিকাঠামো বাড়ানোর পাশাপাশি অন্য কিছু বিষয় মাথায় রাখা জরুরি বলে জানাচ্ছেন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের গোবরডাঙার সম্পাদক এন সি কর। তিনি বলেন, ‘‘শিশু-কিশোরেরা বাইরে সাধারণত বের হয় না। তাই অভিভাবকদের আরও বেশি করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অভিভাবকদের টিকাকরণের উপরে জোর দিতে হবে।’’