Mask

বনগাঁয় মৃত্যু করোনায়, আক্রান্ত প্রায় দেড় হাজার 

বনগাঁ মহকুমা জুড়ে রোজই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কিছু মানুষ তবু কোনও রকম স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। মাস্ক না পরেই বাজার-দোকান করছেন। শারীরিক দূরত্ববিধিও মানছেন না। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৫৯
Share:

মাস্ক নেই। শারীরিক দূরত্ব না মেনেই চলছে আড্ডা। বনগাঁয় ছবিটি তুলেছেন নির্মাল্য প্রামাণিক

করোনা আক্রান্ত এক যুবকের মৃত্যু হল রবিবার সকালে। বনগাঁ শহরের প্রতাপগড়ের বাসিন্দা ওই যুবক জেলা কংগ্রেসের ( গ্রামীণ ) সম্পাদক ছিলেন। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন বছর বিয়াল্লিশের যুবক। গত শুক্রবার করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। রবিবার সকালে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। অ্যাম্বুল্যান্স করে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক মৃত বলে জানিয়ে দেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দশেক আগে তিনি হেপাটাইটিস বি-তে আক্রান্ত হয়েছিলেন। পুরোপুরি সুস্থ হননি।

Advertisement

বনগাঁ মহকুমা জুড়ে রোজই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কিছু মানুষ তবু কোনও রকম স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। মাস্ক না পরেই বাজার-দোকান করছেন। শারীরিক দূরত্ববিধিও মানছেন না। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত বনগাঁ মহকুমায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৫৩ জন। এর মধ্যে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ২৮৭ জন। ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়েছেন ১১৫২ জন। মারা গিয়েছেন ১৪ জন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়েছেন। মহকুমায় সম্প্রতি তৃণমূল-বিজেপি শারীরিক দূরত্ব বজায় না রেখেই রাজনৈতিক কর্মসূচি, মিটিং-মিছিল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকার কিছু মানুষ বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলির উচিত সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। তা না করে উল্টে তারাই শারীরিক দূরত্ববিধি মানছে না। নেতারা মানুষকে মাস্ক পরতে বলছেন। শারীরিক দূরত্ববিধি মেনে চলতে বলছেন। অথচ দলীয় কর্মসূচিতে সে সব মানা হচ্ছে না।’’ যদিও রাজনৈতিক দলগুলি দাবি করছে, স্বাস্থ্য বিধি মেনেই কর্মসূচি চলছে।

মহকুমা জুড়ে চায়ের দোকানগুলিতে বসে সকাল সন্ধ্যা চলছে মাস্ক ছাড়া দেদার আড্ডা। বাজারহাটে শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় রাখার কোনও বালাই নেই। ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে থাকছে না মাস্ক। মিষ্টির দোকানে ভিড় উপচে পড়ছে। সেখানেও অনেকের মাস্ক নেই। যানবাহনে ঠাসাঠাসি করে মানুষ যাতায়াত করছেন। এখন বনগাঁয় জনজীবন কার্যত স্বাভাবিক। করোনার দাপট চলছে। কিন্তু মানুষকে দেখে তা বোঝার উপায় নেই। বনগাঁ শহরে ভ্যান চালক, টোটো চালক, অটো চালকেরা বেশিরভাগই মাস্ক পরেননি। শহরে রাস্তায় অস্থায়ী ফলের দোকান, আখের রস বিক্রির দোকানিরও মাস্ক নেই। এক বাইকে তিনজন যাচ্ছেন। তাঁরা কেউ মাস্ক, হেলমেট কিছুই পরেননি বলে চোখে পড়ছে।

Advertisement

যদিও বনগাঁ পুরসভার পক্ষ থেকে লাগাতার প্রচার কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। প্রচারে শহরবাসীকে প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোতে বারণ করা হচ্ছে। যদি বেরোন তা হলে মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মানুষ রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে শহরবাসীর একাংশের বক্তব্য, পুলিশের এ বিষয়ে কোনও নজরদারি নেই। বনগাঁর পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য সেফহোম করা হয়েছে। যাঁরা বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা সহযোগিতা করেছেন। মানুষকে সচেতন করতে প্রচার করা হচ্ছে। এরপরেও মানুষের সচেতন না হওয়াটা দুঃখজনক।’’

বনগাঁর কিছু গ্রামেও একই চিত্র। বনগাঁর বিএমওএইচ বলেন, ‘‘মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করেছেন এটা ভাল। কিন্তু মাস্ক না পরাটা খুবই বিপজ্জনক প্রবণতা। এর ফলে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।’’ বাগদার বিএমওএইচ প্রণব মল্লিক বলেন, ‘‘ব্লকে দেড়মাস ধরে করোনার সংক্রমণ একই রকম। কিছু মানুষ ধরেই নিয়েছেন, করোনা বলে এখন কিছু নেই। তাই তাঁরা মাস্ক পরছেন না।’’ গাইঘাটার বিএমওএইচ সুজন গায়েন বলেন, ‘‘আক্রান্ত হলেও উপসর্গ না থাকা মানুষ এখন অনেক বেশি। ফলে আমরা উপসর্গ না থাকা মানুষদেরই বেশি করে করোনা পরীক্ষা করাচ্ছি। এর ফলে সংক্রমণ কমবে।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement