সাবধানতা: ঘিরে রাখা হয়েছে পথ। ছবি: সুজিত দুয়ারি
ভাল আছেন করোনা-আক্রান্ত হাবড়ার বৃদ্ধা। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। শুক্রবার তিনি মোবাইলে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথাও বলেছেন। দিনকয়েক আগে করোনা-আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই বৃদ্ধার দাদার। এটাই হাবড়ায় করোনাভাইরাসে একমাত্র মৃত্যু। হাবড়ার বাসিন্দারা সকলেই চাইছেন, বৃদ্ধা দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসুন।
হাবড়া পুরসভার মেডিক্যাল অফিসার মানস দাস শুক্রবার দুপুরে বলেন, “হাবড়ার করোনা-আক্রান্ত বৃদ্ধা সুস্থ আছেন। বারাসতে কোভিড হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে।” হাবড়া ১ বিডিও শুভ্র নন্দী বলেন, “বৃদ্ধা ভাল আছেন। শনিবার এলাকার কয়েকজনের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হবে।” হাবড়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান নীলিমেশ দাস জানিয়েছেন, ওই বৃদ্ধার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। আক্রান্তকে নিয়ে কোনওরকম গুজব না ছড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে। বৃদ্ধার ভগ্নিপতি বলেন, “ফোনে ওঁর সঙ্গে কথা বলেছি। উনি স্বাভাবিক আছেন, ভাল আছেন।”
ওই বৃদ্ধার পাড়ায় আতঙ্ক ছড়ালেও হাবড়া শহরে লকডাউন উপেক্ষা করে যথেচ্ছ ঘোরাঘুরি এখনও বন্ধ হয়নি। যদিও পুলিশ লকডাউন উপেক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে ধরপাকড় চালাচ্ছে। তারপরেও অকারণ ঘোরাঘুরিতে রাশ টানা যাচ্ছে না। যেহেতু এখন আগের থেকে অনেক বেশি দোকান খুলে গিয়েছে, তাই রাস্তায় নামা জনতাকে সামলানো পুলিশের পক্ষেও কঠিন হয়ে উঠছে বলে মনে করছে শহরের বাসিন্দাদের একাংশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতি ও শুক্রবার লকডাউন ভাঙার জন্য ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এঁদের বেশিরভাগই মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় নেমেছিলেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধার দাদা করোনা-আক্রান্ত হয়েছিলেন। রবিবার রাতে বারাসতের কোভিড হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। বুধবার সন্ধ্যায় ওই বৃদ্ধার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট প্রশাসনের কাছে পৌঁছয়। ওই রাতেই তাঁকে বারাসতে করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃদ্ধার আত্মীয়স্বজন-সহ সাতজনকে বারাসতে নিভৃতবাস কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। আগেও এলাকা জীবাণুমুক্ত করা হয়েছিল।
বৃহস্পতিবার বৃদ্ধার বাড়ি সংলগ্ন এলাকা ফের দমকল বাহিনী জীবাণুমুক্ত করেছে। মানস জানান, পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা রোজ ওই এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে কারও জ্বর-সর্দি-কাশি আছে কিনা খোঁজ নিচ্ছেন। সন্দেহজনক মনে হলে তাঁদের হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ফিভার ক্লিনিকে শারীরিক পরীক্ষা করানো হচ্ছে। প্রয়োজনে লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃদ্ধের মৃত্যুর পরে তাঁর পাড়া গণ্ডিবদ্ধ এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ওই এলাকার পাঁচটি বাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। করোনায় বৃদ্ধের মৃত্যুর পরেও শহরের বাসিন্দাদের একাংশের হুঁশ যে ফেরেনি, শুক্রবারও তা দেখা গেল। অনেকেই মুখে মাস্ক না পরে পথে বেরিয়েছেন। মানস বলেন, “পুরসভার তরফে মাইকে প্রচার করে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। তবুও অনেকেই মাস্ক পরছেন না। কারও মাস্ক নাকের নীচে, কারও আবার গলায় ঝুলছে।”
অন্য দিকে, হাবড়া পুর এলাকার বাসিন্দা করোনা এক নার্স শুক্রবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। স্থানীয় মানুষজন করতালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান। পার্কসার্কাসে একটি নার্সিংহোমে কাজ করেন তিনি। লকডাউনের কারণে নার্সিংহোমে থেকেই কাজ করছিলেন। ৫ মে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছিল। চিকিৎসা চলছিল কলকাতাতেই।