বন্ধ হয়ে গিয়েছে এই জুটমিলটি। ছবি: মাসুম আখতার।
করোনায় এমনিতেই কাজকর্ম কার্যত বন্ধ অনেক জায়গায়। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বিভিন্ন জেলায় বন্ধ ১৬টি জুটমিল। যার জেরে কর্মহীন প্রায় ৭৫ হাজার শ্রমিক।
মঙ্গলবার সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে জুটমিলের দরজায় বন্ধের নোটিস ঝুলতে দেখেন টিটাগড়ের এম্পায়ার জুটমিলের শ্রমিকেরা। একই ঘটনা ঘটে বুধবার, হাওড়ার বালির মহাদেব জুটমিলে। সেখানেও সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে শ্রমিকেরা মিলের গেটে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলতে দেখেন। গত দু’মাসে উত্তর ২৪ পরগনায় নৈহাটি জুটমিল, প্রবর্তক, এম্পায়ার, রিলায়েন্স-সহ ছ`টি জুটমিল বন্ধ হয়েছে। হুগলি, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও বন্ধ একাধিক জুটমিল।
জুটমিল মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান জুটমিল অ্যাসোসিয়েশন (ইজমা) সূত্রের খবর, করোনার কারণে ৩০ শতাংশ লোক নিয়ে কাজ করাতে গিয়ে পোষাতে পারছে না বহু মিল। সেই সঙ্গে কাঁচা পাট-সহ অন্যান্য সমস্যাগুলিও যুক্ত হওয়ায় মিল বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। এ নিয়ে কথা বলতে সংগঠনের চেয়ারম্যান রাঘবেন্দ্র গুপ্তের সঙ্গে ফোনে এবং মেসেজ পাঠিয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজের উত্তরও দেননি।
শ্রমিক সংগঠনগুলি জানাচ্ছে, সব মিলিয়ে ১৬টি জুটমিল বন্ধ। মিলগুলিকে ঘিরে গড়ে ওঠা খাবারের দোকান-সহ রোজগারের অন্য ক্ষেত্রগুলিও তাই বন্ধ।
সূত্রের খবর, প্রতি বছর সারা দেশে পাটের উৎপাদনের পরিমাণ থাকে ৯০ লক্ষ বেল। গত বছর আমপানের কারণে পাটের ফলন নষ্ট হয়েছে। কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রকের দাবি, পাটের ফলন নষ্ট হলেও পরের পর জুটমিল বন্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। পরিস্থিতির উপরে নজরে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্রমন্ত্রকের জুট কমিশনার মলয়চন্দন চক্রবর্তী।
মন্ত্রকের পদাধিকারীদের একাংশের দাবি, এর পিছনে কাঁচা পাটের কারবারিদের একাংশের কালোবাজারির উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। এক উচ্চ পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে বাজারে কাঁচামালের একটা অভাব তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। তবে কোনও কোনও জায়গায় কর্তৃপক্ষেরও মিল চালানোর সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’’
দেশে সব থেকে বেশি পাট উৎপন্ন হয় পশ্চিমবঙ্গে। বর্তমানে রাজ্যের জুটমিলগুলির হাতে পাটের বস্তা-সহ অন্য পাটজাত দ্রব্যের বরাতও ভালই রয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত দাম না পেয়ে অনেকেই অন্য শস্য ফলনের দিকে ঝুঁকছেন বলে অভিযোগ পাটচাষিদের। সারা ভারত কিসান ও খেতমজুর সংগঠনের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি স্বপন দেবনাথের কথায়, ‘‘চাষিরা উপযুক্ত দাম না পেয়ে বাধ্য হচ্ছেন অল্প দামে ফসল বিক্রি করে দিতে। এতে তাঁরাও পাটচাষে উৎসাহ হারাচ্ছেন।’’
তৃণমূল পরিচালিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি। সভানেত্রী দোলা সেন জুটমিল বন্ধের পিছনে দায়ী করেছেন কেন্দ্রের ভূমিকাকে। দোলার কথায়, ‘‘মালিকেরা বাধ্য হয়েই মিল বন্ধ করছেন। কেন্দ্রীয় সরকার চাষিদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যটুকও দিচ্ছে না। আমরা একাধিক বৈঠক করেছি বস্ত্রমন্ত্রকের মন্ত্রীর সঙ্গে। এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে আমরা লকডাউনের পরে নতুন করে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলব। মিলগুলির সঙ্গেও আলোচনা হবে। তার আগে শ্রমিকদের বলা হয়েছে একটু ধৈর্য ধরতে। মিলের চাকা আবারও ঘুরবে।’’
বামপন্থী শ্রমিক সংগঠন বেঙ্গল জুটমিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমল সেন বলেন, ‘‘অবিলম্বে মিলগুলি চালু করে শ্রমিকদের কাজে বহাল করতে রাজ্য ও কেন্দ্র উভয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করছি আমরা। নানা ফিকিরে মিল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’’