প্রতীকী ছবি।
নিজেদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য নানা ধরনের বুদ্ধির খেলা, সেলফ মোটিভেশান-সহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নিয়েছেন গোসাবা ব্লকের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
সারা বিশ্ব করোনা সংক্রমণে জর্জরিত। ইতিমধ্যেই প্রায় দু’শোটি দেশে থাবা বসিয়েছে কোভিড ১৯ ভাইরাস। লড়াই করছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। অনেক সময়ে করোনার কাছে হারও মানতে হয়েছে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের। কিন্তু তবুও লড়াই থামেনি। এখনও প্রতি মুহূর্তে করোনা মোকাবিলার জন্য রাতদিন এক করে কাজ করে চলেছেন এঁরা।
কিন্তু একটানা কাজ করতে গিয়ে মানসিক ভাবে চাপের মধ্যে আছেন অনেকেই। তাই নিজেদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত করছেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। এখনও পর্যন্ত সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গোসাবা ব্লকে করোনা সংক্রমণের কোনও খবর নেই। তবে দ্বীপাঞ্চলে যাতে এই সংক্রমণ রোধ করা যায়, সে জন্য নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক স্তরে। ইতিমধ্যেই খেয়াঘাটগুলিতে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। অন্য জেলা থেকে আগত পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাঁদেরকে ১৪ দিনের নিভৃতবাসে রেখে শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষাও করা হচ্ছে। গোসাবা ব্লক প্রাথমিক হাসপাতাল লাগোয়া এলাকাতেই চালু করা হয়েছে ফিভার ক্লিনিক। যে কোনও ধরনের জ্বর হলেই এই ক্লিনিকে চিকিৎসা করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এত সব ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও কিছু মানুষ প্রশাসনের নজর এড়িয়ে রাতে ভুটভুটি ভাড়া করে নদী পার হয়ে শহর থেকে চলে আসছেন গোসাবায়। ফলে ভয় থাকছে এই দ্বীপাঞ্চলে সংক্রমণ ছড়ানোর। এমন অবস্থায় এই ব্লকের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা যথেষ্ট চিন্তিত। এলাকায় সংক্রমণ হলে কী ভাবে তা মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট মানসিক চাপে রয়েছেন তাঁরা।
একদিকে করোনা আতঙ্ক, আর অন্যদিকে পরিবারকে ছেড়ে এই দ্বীপাঞ্চলে দিনের পর দিন কাটানোর কারণে অনেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছেন। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে দলবদ্ধ ভাবে করোনার মোকাবিলা করতে চাইছেন গোসাবা ব্লকের এই চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা।
এঁদের থাকার জন্য ওয়েলনেস সেন্টার তৈরি হয়েছে পাখিরালয়ে। সেখানে জেলা পরিষদের অতিথি নিবাসে রয়েছেন জনা পনেরো চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। প্রতিদিন কাজের শেষে সন্ধ্যা বেলায় সকলেই নিজেদেরকে মানসিক চাপ মুক্ত রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলা, বিখ্যাত মানুষদের জীবনী পাঠ, নীতিবাক্য পর্যালোচনা, দেশপ্রেম-সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। অনেকে আবার নিজের নিজের প্রতিভা অনুযায়ী গান, আবৃত্তি, নাচ পরিবেশন করছেন নিজেদের মধ্যেই। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মূলত ‘মেন্টাল থেরাপি’, ‘সেলফ মোটিভেশন’ ও ‘ওয়ার্ক উইথ অল’ এই তিন বিষয়ের উপরে বেশি করে জোর দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিগত দিন দশেক ধরে তাঁরা এই কর্মসূচি করছেন। এতে ফলও মিলছে। ওয়েলনেস সেন্টারে থাকা চিকিৎসক ইন্দ্রনীল বর্গী বলেন, ‘‘নিজেদের সুস্থ ও চাপমুক্ত রাখতে এই উদ্যোগ উপকারী। এর ফলে আমাদের পরিবারকে ছেড়ে দিনের পর দিন থাকার যে কষ্ট, তা অনেকখানি দূর হয়েছে। আমাদের সকলের লক্ষ্য এখন করোনার বিরুদ্ধে লড়াই ও সুস্থ সমাজ আগামীকে উপহার দেওয়া।’’ একই বক্তব্য এই ওয়েলনেস সেন্টারে থাকা প্রসেনজিৎ মণ্ডল, উজ্জ্বল মণ্ডল, স্বাস্থ্যকর্মী নীলিমা জানা, সঙ্গীতা ঘোষ, কণিকা মণ্ডলদের। চিকিৎসকদের এই উদ্যোগ কার্যকরী হওয়ায় আগামী দিনে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হবে বলে গোসাবা ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর।
কেরলের মতো ভিন রাজ্যে যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকেরা লকডাউনের ফলে আটকে রয়েছেন, তাঁরাও মানসিক অবসাদে ভুগছেন বাড়ি ফিরতে না পেরে। তাঁদের মানসিক অবসাদ দূর করতে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন শ্রমিকদের লুডো, তাস, দাবা-সহ বিভিন্ন খেলার জিনিসপত্র সরবরাহ করেছে। পাশাপাশি তাঁরা যাতে প্রতিনিয়ত পরিবারের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে পারেন, যোগাযোগ রাখতে পারেন, সে জন্য মোবাইল চার্জের ব্যবস্থাও করা হয়েছে কেরল সরকারের পক্ষ থেকে।