nনিধন: জমা জলে ডেঙ্গির লার্ভা নষ্ট করে দিচ্ছেন বনগাঁ পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা।
করোনা মোকাবিলায় জারি বিধিনিষেধের জেরে সংক্রমণের শীর্ষে থাকা উত্তর ২৪ পরগনায় দৈনিক সংক্রমিতের সংখ্যা নেমে এসেছে দু’হাজারের নীচে। তবে তাতে স্বাস্থ্যকর্তাদের উদ্বেগ কমেনি। স্বাস্থ্য দফতরের কাছে খবর, ইতিমধ্যেই জেলায় প্রাদুর্ভাব ঘটেছে ডেঙ্গির। আক্রান্তের সংখ্যা কুড়ির বেশি বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
ডেঙ্গি হোক বা করোনা—আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে বরাবরই শীর্ষে থাকে এই জেলা। অতীতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ উঠছে ভুরি ভুরি। তবে এ বার সতর্ক জেলা প্রশাসন।
বুধবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত কম। তবে, ডেঙ্গি থাবা বসাতে শুরু করেছে।’’ জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা জানান, জেলায় এখনও পর্যন্ত ২০-২৫ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা সকলেই শহর বা শহরতলীর বাসিন্দা।
বর্ষার মরসুমে ডেঙ্গি রুখতে কী পদক্ষেপ করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে আজ, বৃহস্পতিবার প্রশাসনের কর্তারা জরুরি বৈঠকে বসতে চলেছেন। জেলাশাসকের মন্তব্য, ‘‘ডেঙ্গি রুখতে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলা মনিটরিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে পুরসভা, ব্লক এবং সেচ-সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে ডাকা হয়েছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ইতিমধ্যেই গ্রাম-শহরে স্বাস্থ্যকর্মীরা জমা জল সরানো, মশার লার্ভা শনাক্তকরণ ও তা নষ্ট করার কাজ করছেন। গাপ্পি মাছ ছাড়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। নিকাশি নালা, খাল, বিল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ জ্যোতি চক্রবর্তী জানিয়েছেন, গ্রামীণ এলাকায় ডেঙ্গিতে কেউ আক্রান্ত হননি। ডেঙ্গি রুখতে সব ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে। তবে চিকিৎসকদের একাংশের মতে, সরকারি পরিকাঠামো এবং পরিষেবায় কিছুটা ঘাটতি থাকায় ডেঙ্গি-করোনার মতো রোগের প্রকোপ এখানে বেশি।
বারাসত পুরসভা এলাকায় এখনও কেউ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হননি বলে দাবি পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর প্রধান সুনীল মুখোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গি রুখতে এখন থেকেই মশা মারার তেল ছড়ানো শুরু করেছি। গাপ্পি মাছ ছাড়া হচ্ছে। নালা পরিষ্কার রাখা হচ্ছে। তবে, বাড়ির ছাদে জমা জল রয়েছে কিনা তা দেখতে গেলে অনেকেই স্বাস্থ্যকর্মীদের সেই কাজের অনুমতি দিচ্ছেন না। স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিচয়পত্র দিয়েছি। ছাদে ফুলের টবে জল জমে থাকলে তাঁরা তা ফেলে দিয়ে আসছেন।’’
বনগাঁ পুরসভার তরফেও ডেঙ্গি মোকাবিলায় পদক্ষেপ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িবাড়ি গিয়ে জমা জল ফেলে দিচ্ছেন। মশার লার্ভা ধ্বংস করছেন। বনগাঁর পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘পুর-এলাকায় এখনও ডেঙ্গিতে কেউ আক্রান্ত হননি। মশা মারার তেল স্প্রে করছি। বাড়ির মধ্যে জল জমতে দেওয়া হচ্ছে না।’’ একই দাবি হাবড়া এবং অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর-কর্তৃপক্ষের। হাবড়ার পুর-প্রশাসক নীলিমেশ দাসের দাবি, ‘‘ডেঙ্গি ছড়ায়নি। স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরছেন। মানুষকে সচেতন করছেন।’’
২০১৭ সালে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার নেয়। পাঁচটি মহকুমাতেই ডেঙ্গি রীতিমতো ত্রাস ছড়িয়েছিল। বিশেষ করে দেগঙ্গা, হাবড়া এবং অশোকনগরে ডেঙ্গির প্রকোপ ছিল বেশি। ঘরে ঘরে জ্বর দেখা দিয়েছিল। স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং হাতুড়ে চিকিৎসকদের চেম্বারেও জ্বরে আক্রান্ত মানুষের লম্বা লাইন দেখা গিয়েছিল। দেগঙ্গায় ডেঙ্গি রুখতে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর পরিবর্তে আটা ছড়ানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিতর্কের ঝড় উঠেছিল রাজ্যে। ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ ছিল, ডেঙ্গিকে সাধারণ জ্বর বলে চেপে যাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।
২০১৯ পর্যন্ত ডেঙ্গির প্রকোপ ছিল ভালই। তবে, গত বছর ডেঙ্গির দাপট ছিল তুলনায় কম।