প্রতীকী ছবি
কলকাতাকেও টপকে গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, করোনা আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে, গত এক সপ্তাহ ধরে কলকাতারও আগে থাকছে মহানগর লাগোয়া এই জেলা। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে এই মুহূর্তে রাজ্যেও প্রথম উত্তর ২৪ পরগনা। প্রায় পাঁচ মাস ধরে কলকাতা করোনা-সংক্রমণে ছিল এক নম্বরে।
উত্তর ২৪ পরগনার এই পরিসংখ্যান নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে সোমবার ভার্চুয়াল বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে নিজেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা বুঝতে অবশ্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। সম্প্রতি হাবড়ায় বামেদের তরফ থেকে বেসরকারি একটি সংস্থাকে দিয়ে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বেশ কিছু মানুষের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। এঁদের কারও দেহেই কোনও উপসর্গ নেই। ফলে কোথাও কোথাও গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়েছে কিনা, সে প্রশ্নও উঠছে।
অগস্টের প্রথম সপ্তাহেও এই জেলায় দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যাটা ঘোরাফেরা করছিল পাঁচশোর ঘরে। আচমকাই প্রায় দু’শোর বেশি বেড়ে সাতশো ছাড়িয়ে যায়। তারপর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা কোনও কোনও দিন সাড়ে পাঁচশোর আশেপাশে থাকলেও পাঁচশোর নীচে আর নামেনি। সোমবার ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীও উত্তর ২৪ পরগনার সংক্রমণ নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন। জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তীও জানান, ব্যারাকপুরের সংক্রমণ নিয়েই তাঁরা বিশেষ চিন্তিত। মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করেন, শিল্পাঞ্চল ব্যারাকপুরের জনঘনত্ব অনেক বেশি। ফলে সংক্রমণের সম্ভাবনাও বেশি। তবে আরও সাবধান হওয়া জরুরি। একই কথা বলছেন, উত্তর ২৪ পরগনার জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপসকুমার রায়।
তিনি বলেন, “কলকাতার তুলনায় উত্তর ২৪ পরগনার জনসংখ্যা অনেক বেশি। তবে জনঘনত্ব কম বলে সংক্রমণের হার কম ছিল এত দিন।’’ পরীক্ষা বেড়েছে বলে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে বলেই তাঁর মত। সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় সে জন্য সাধারণ মানুষকে আরও বেশি করে সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার পর্যন্ত উত্তর ২৪ পরগনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২৯,৩১৫ জন। ওই দিন জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬৯৬ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৮ জন আক্রান্তের। জেলায় ওই দিন অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৭৯৬ জন। এ দিন কলকাতায় আক্রান্ত হন ৫৬৩ জন।
রবিবার পর্যন্ত কলকাতায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬,২৫৭। অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ৫৮৯০। সংখ্যার নিরিখে যা উত্তর ২৪ পরগনার প্রায় সমান।
জেলায় সংক্রমিতের সংখ্যায় শীর্ষে ব্যারাকপুর মহকুমা। জেলার মোট আক্রান্তের এক তৃতীয়াংশই এই মহকুমায়। সংক্রমিতের সংখ্যা সব থেকে বেশি আবার দমদম এলাকায়। দক্ষিণ দমদম এবং উত্তর দমদম পুরসভা এলাকায় সংক্রমণ এত দ্রুততার সঙ্গে বাড়ছিল যে, দুই পুর-কর্তৃপক্ষই স্থানীয় ভাবে লকডাউন করেছিল। দক্ষিণ দমদম একাধিকবার আংশিক লকডাউন করেছিল এলাকায়। তার ফলে সংক্রমণ কিছুটা কমেছে বলেই খবর। বসিরহাট মহকুমাতেও সংক্রমণের গতি বেড়েছে। প্রথম দিকে বনগাঁ মহকুমায় আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বর্তমানে সংক্রমণের হার চিন্তায় ফেলেছে স্বাস্থ্যকর্তাদের।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে বেশ কিছু এলাকায় সংক্রমণের হার অত্যধিক বেড়েছে। নির্দিষ্ট এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধিতে গোষ্ঠী সংক্রমণের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও স্বাস্থ্যকর্তারা গোষ্ঠী সংক্রমণের বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। দিন যত গড়াচ্ছে, আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও মানুষের বেপরোয়া মনোভাবও বাড়ছে বলে মনে করছে প্রশাসন। বিধিমতো সুরক্ষা ছাড়াই এখনও অনেকে বাইরে বেরিয়ে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়াচ্ছেন। সেটাই চিন্তার।