অসচেতন: করোনা বিধি শিকেয় তুলে চলছে কেনাকাটা। বনগাঁয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
অগস্ট মাসের ২৩ তারিখ উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় দৈনিক করোনা সংক্রমণ কমে হয়েছিল ৫৬। এরপর তা ক্রমশ ১০০ ছাড়ায়। ফের কিছুটা কমতে থাকে সংক্রমণ। ২৭ সেপ্টেম্বর সংখ্যাটা হয় ৭২। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকেই দৈনিক সংক্রমণ একশো ছাড়িয়েছে। দৈনিক মৃত্যুর ঘটনাও অব্যাহত।
সংক্রমণের এই সাম্প্রতিক তথ্য-পরিসংখ্যানে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরা। জেলায় এখনও করোনার ১০০ শতাংশ টিকা দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ হয়নি। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলার ৭৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ৮৬৪ জন ভোটারের মধ্যে প্রথম ডোজ় পেয়েছেন ৫৪ লক্ষ মানুষ। দ্বিতীয় ডোজ় পেয়েছেন ২১ লক্ষ ২৫ হাজার জন।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার পর্যন্ত জেলায় করোনায় আক্রান্ত অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যা ছিল ১২১৮ জন। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর, এই সাতদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯৯ জন। এই সময়ে মারা গিয়েছেন ২৫ জন। যদিও চলতি বছরের মে মাসে দৈনিক সংক্রমণ প্রায় সাড়ে চার হাজারের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দুর্গাপুজোর কেনাকাটা করতে পথে বেরিয়ে মানুষের বেপরোয়া মনোভাব উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। মাস্ক পরছেন না অনেকেই। শারীরিক দূরত্ববিধি বজায় থাকছে না। কারও কারও মাস্ক থাকলেও ঝুলছে থুতনিতে। এছাড়া রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জমায়েত করে সভা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি উড়িয়ে। দিন কয়েক আগে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যবিধি শিকেয় তুলে হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, এসব কারণেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আশঙ্কার কথা শোনা যাচ্ছে চিকিৎসক মহলে। সতর্ক থাকার কথা বলছে প্রশাসন। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউ কিছুটা স্তিমিত হতেই কোভিড বিধি শিকেয় তুলে বেলাগাম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার আমজনতার একটা বড় অংশ।
জেলায় সংক্রমণ কিছুটা কমলেও তাতে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসক থেকে স্বাস্থ্যকর্তারা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, আরও কিছুদিন মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। না হলে সংক্রমণ বাড়তে সময় লাগবে না। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপসকুমার রায় বলেন, ‘‘আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনা চলে যায়নি। তাই ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলেও সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’’
জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘জেলার পুরসভা এলাকায় প্রায় ১০০ শতাংশ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ় পেয়েছেন। এখন টিকার সরবরাহ ভাল রয়েছে। দ্রুত টিকা দেওয়ার কাজ শেষ করা হবে।’’ পুজোর বাজার নিয়ে জেলাশাসক বলেন, ‘‘আমরা পুজো উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী-সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে বৈঠক করছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছি।’’
পুজোর বাজারে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই মাস্ক পরেননি। মহিলারা সেজেগুজে মাস্ক না পরে বের হচ্ছেন। এক মহিলার কথায়, ‘‘ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে বেরিয়েছি। মাস্ক পরলে তাতে লেগে যাবে। তা ছাড়া সংক্রমণ তো এখন অনেক কমে এসেছে।’’
টিকা নেওয়া লোকজনের একাংশের মধ্যেও বেপরোয়া মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাঁরা বাইরে বেরচ্ছেন মাস্ক ছাড়াই। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বহু প্রবীণও। এ প্রসঙ্গে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কিছু মানুষ ভ্যাকসিন নিয়ে ভাবছেন, তাঁরা করোনা থেকে মুক্ত। কিন্তু মনে রাখা উচিত, টিকা নিলেও করোনা-সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে।’’
সূত্র : জেলা প্রশাসন