বে-হুঁশ: বছরের শেষ দিনে গদখালিতে। ছবি: প্রসেনজিৎ সাহা।
দুই ২৪ পরগনাতেই বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। দিন দশেক আগেও উত্তর ২৪ পরগনায় দৈনিক সংক্রমণ ছিল ষাটের আশপাশে। এক লাফে সেই সংখ্যা পাঁচশোর কাছাকাছি। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, শুক্রবার জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯৬ জন। বৃহস্পতিবার ৩১৫ জন আক্রান্ত হন। অথচ ২০ ডিসেম্বর আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬২। জেলায় করোনায় মৃত্যুও হচ্ছে রোজ। গত এক মাসে মৃত্যু হয়েছে ৮৪ জনের।
সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০ ডিসেম্বর এই জেলায় সংক্রমিত হয়েছিলেন ২৫ জন। ৩০ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা একশো ছাড়ায়। শুক্রবার জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২৬ জন।
এক শ্রেণির মানুষের বিধি ভেঙে জীবনযাপনের জেরেই সংক্রমণ বাড়ছে বলে মত চিকিৎসকদের। চিকিৎসকদের অনেকেই বলছেন, শুধু সংখ্যা দেখে পরিস্থিতি বিচার করা ঠিক নয়। বাস্তবে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। কারণ, অনেকেই উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্তাদের আশঙ্কা, কিছু মানুষের বেপরোয়া মনোভাবের ফলে দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
এক চিকিৎসকের কথায়, “প্রতিষেধক নেওয়াটাই শেষ নয়। বড় অংশের মানুষ ভাবছেন প্রতিষেধক নেওয়া আছে মানে যা খুশি করতে পারবেন। সেই মানসিকতা থেকেই তাঁরা মাস্ক পরছেন না। দূরত্ব বিধি মানছেন না। বিপদটা হল পঁচিশ বছরের যুবক করোনায় আক্রান্ত হলে, তিনি হয়তো সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সেই যুবকদের মাধ্যমে বাড়ির বয়স্ক বাবা-মা আক্রান্ত হচ্ছেন। তখন পরিস্থিতি যথেষ্ট জটিল হয়ে উঠছে।”
দুই জেলার সর্বত্রই চলছে মেলা, খেলা, রাজনৈতিক সমাবেশ। নিত্যদিন ভিড় হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক স্পটগুলিতে। অভিযোগ, প্রায় কোথাও চোখে পড়ছে না মাস্ক। শারীরিক দূরত্ব-বিধি বজায় থাকছে না। বাজারগুলিতে বেশিরভাগ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই। অনেকেই থুতনিতে মাস্ক নামিয়ে বেচা-কেনা করছেন। ট্রেন, বাস, অটো, টোটো-সহ গণ পরিবহণেও মানুষ মাস্ক ছাড়া যাতায়াত করছেন। রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনেকেই মাস্ক নামিয়ে ধূমপান করছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সংক্রমণ রুখতে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালগুলিকে তৈরি রাখা হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, জেলায় করোনায় প্রকোপ বেশি বিধাননগর এবং দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায়। সেখানে ওয়ার্ডভিত্তিক সমীক্ষা করে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “আমরা মানুষকে সচেতন করতে আবার মাইকে প্রচার শুরু করেছি। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলিকে নিয়ে বৈঠক করছি। এখন জেলায় রোজ হাজার ছয়েক করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই সংখ্যাটা দ্রুত বাড়ানো হচ্ছে। ওমিক্রন নিয়েও প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে।”