বিতর্কে জড়ালেন ভোগালি-২ পঞ্চায়েতের প্রধান মোদাচ্ছের হোসেন।
বিরোধী দলের লোকজনকে শাসাতে গিয়ে ভুল করে ফেলছেন দলীয় কর্মীরা। বার বার বলে দেওয়া হচ্ছে, পিছনে মারতে। তা না শুনে মাথায় মেরে রক্ত বার করে দিচ্ছেন তাঁরা। যার জেরে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। রুজু হচ্ছে একের পর এক মামলা। তা এড়াতে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে ‘ভেবেচিন্তে’ করে মারধর করার পরামর্শ দিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত প্রধান!
ভাঙ়ড়ের ভোগালি-২ অঞ্চলের মোল্লাপাড়ায় শনিবার শাসক দলের একটি কর্মিসভা ছিল। সেখানে হাজির ছিলেন ভোগালি-২ পঞ্চায়েতের প্রধান মোদাচ্ছের হোসেন। তাঁর বিরুদ্ধেই প্রকাশ্যে বিরোধীদের মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। ওই তৃণমূল নেতার ভাষণের একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। যার সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে মোদাচ্ছেরের ওই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। ভাঙড়ের বিধায়ক তথা আইএসএফ নেতা নওশাদ সিদ্দিকির কটাক্ষ, ‘‘এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি।’’ রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির মন্তব্য ঘিরে সাম্প্রতিক বিতর্কের প্রসঙ্গ টেনে শাসকদলকে কটাক্ষ করেছে বিজেপিও। তৃণমূলের ব্লক নেতৃত্ব অবশ্য পঞ্চায়েত প্রধানের মন্তব্যকে সমর্থন করেনি।
প্রকাশ্যে আসা ভিডিয়োয় মোদাচ্ছেরকে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমাদের সব দিকে নজর রাখতে হবে। পঞ্চায়েতেও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। আজকের পর থেকে আমরা যে ভাবে নির্দেশ দেব, সেই ভাবেই তৈরি হতে হবে। দুটো বুথ নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করে প্রতিটি বুথে ২০ জন করে ছেলে তৈরি রাখতে হবে। বাকিটা আমরা বুঝে নেব।’’ এর পরেই প্রধান বলেন, ‘‘তোমাদের পিছনে মারতে বলছি। আর তোমরা গিয়ে মাথায় মেরে মাথা ফাটিয়ে দিচ্ছ। তোমরা জানো না যে, মাথায় মারলে কেস (মামলা) হয়।’’ ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, মোদাচ্ছের যখন এই ধরনের মন্তব্য করছেন, তখন তাঁর পাশেই বসা দলের প্রাক্তন বিধায়ক তথা ‘দাপুটে নেতা’ আরাবুল ইসলাম।
গত লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগেও পঞ্চায়েত অফিসে ‘কৃষকবন্ধু’র চেক বিলি করতে গিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করে শিরোনামে উঠে এসেছিলেন মোদাচ্ছের। হুমকি দিয়ে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থীকে ভোট না দিলে সরকারি কোনও সুযোগ সুবিধা আর মিলবে না। ভোটটা তৃণমূলকেই দিতে হবে। না হলে কেড়ে নেওয়া হবে কৃষকদের পরিচয়পত্র। ভবিষ্যতে মিলবে না কৃষকবন্ধুর চেক। মৃত্যুর পর পরিবার পাবে না ক্ষতিপূরণও।
সেই পঞ্চায়েত প্রধানের আরও একটি হুমকির ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই শাসকদলকে কড়া ভাষায় বিঁধেছেন স্থানীয় বিধায়ক নওশাদ। তিনি বলেন, ‘‘এটাই তৃণমূলের কালচার (সংস্কৃতি)। এরা মানুষকে ভয় দেখিয়ে কুকথা বলে থামিয়ে দিতে চায়। ভাবছে, হুমকি দিয়ে ভোট করাবে। কিন্ত এলাকার মানুষ তো সবই জানেন। তাই, গত বিধানসভাতেও ভাঙড়ে হেরে গিয়েছিল ওরা। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও মানুষ সঠিক জবাব দেবেন।’’
তাঁর মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতেই মোদাচ্ছেরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তিনি অবশ্য এই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে ভাঙড়-২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি আব্দুল ওদুদ মোল্লা আইএসএফ-কে পাল্টা আক্রমণ করে বলেন, ‘‘আইএসএফ একটা চিটিংবাজের দল। মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিভেদ তৈরি করে। তাই হয়তো প্রধান বক্তৃতা করতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে দু’-চার কথা বলে দিয়েছেন। তবে যে ভাবে বলেছেন, তা উচিত হয়নি। হুমকি, মারধর— এই সব তৃণমূলের সংস্কৃতি নয়।’’
ঘটনাচক্রে, রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে রাজ্যের কারা দফতরের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী অখিলের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে রাজ্য জুড়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখাতে শুরু করেছে বিজেপি। সেই আবহেই ভাঙড়ের তৃণমূল নেতার এই মন্তব্য দলকে আরও অস্বস্তি ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন অনেকে। বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগনা (পূর্ব) সাংগঠনিক জেলার সভাপতি উত্তম কর বলেন, ‘‘এটাই তৃণমূলের আসল রূপ। দলের উচ্চ নেতৃত্ব যে ভাষায় কথা বলেন, অনুগামীরা তো তা-ই করবে। দলের বড় নেতা যখন রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করছেন, তখন দলের পঞ্চায়েত প্রধানের মুখে এই মন্তব্য একেবারেই অস্বাভাবিক নয়।’’