Bhangar Cold Storage

জমি কমিটির দাবি মেনে ভাঙড়ে শুরু হিমঘর তৈরির কাজ

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাঙড় ২ ব্লকের পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের টোনা মৌজায় চারটি দাগে প্রায় ৩৪ জন চাষির থেকে ১৫৬ শতক জমি কেনা হয়েছে।

Advertisement

সামসুল হুদা

ভাঙড়  শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২২ ০৯:১১
Share:

শুরু হয়েছে হিমঘরের সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ। নিজস্ব চিত্র

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে জমি কমিটির দাবি মেনে অবশেষে ভাঙড়ে শুরু হয়েছে হিমঘর তৈরির কাজ। খুশি চাষিরা। ওই হিমঘর তৈরির জন্য সরকারি ভাবে এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জমি কেনার কাজ শেষ করে সীমানা-পাঁচিল নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।

Advertisement

ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাঙড় ২ ব্লকের পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের টোনা মৌজায় চারটি দাগে প্রায় ৩৪ জন চাষির থেকে ১৫৬ শতক জমি কেনা হয়েছে। হিমঘর তৈরির জন্য জমি কিনতে সরকারি ভাবে বরাদ্দ হয়েছিল ২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। জমি কেনার পর সম্প্রতি শুরু হয়েছে হিমঘরের সীমানা-পাঁচিল নির্মাণের কাজ। এ জন্য ৫২ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়েছে। জমি কেনা ও সীমানা-পাঁচিল নির্মাণের জন্য প্রথম পর্যায়ে ২ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। পাঁচিলের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকা অনুমোদন করা হবে হিমঘর নির্মাণ কাজে, এমনটাই জানাচ্ছে প্রশাসন।

ভাঙড় ২ ব্লকের পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েতের নতুনহাট এলাকায় সরকারি ভাবে পাওয়ার গ্রিড নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ জন্য এলাকার জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালের শেষ দিকে পাওয়ার গ্রিড বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। ওই আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল জমি, জীবিকা, বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি। গ্রিড বিরোধী জমি আন্দোলনের ফলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল পাওয়ার গ্রিড নির্মাণের কাজ। ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভাঙড়ের ওই এলাকা। আন্দোলনকে ঘিরে রক্তাক্ত হয়ে উঠেছিল পোলেরহাট ২ পঞ্চায়েত এলাকা। গুলিতে দুই গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়।

Advertisement

দীর্ঘ আন্দোলনের পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে জমি কমিটির দীর্ঘ আলোচনার পরে সমাধান সূত্র বের হয়। সে সময়ে জমি কমিটির সঙ্গে সরকারের বেশ কিছু বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল। ক্ষতিপূরণের জন্য ১২ কোটি টাকা, জমি কমিটির কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে ইউপিএ-সহ বিভিন্ন মামলা প্রত্যাহার, লাউহাটি-হাড়োয়া রাস্তা সংস্কার, ১০ শয্যাবিশিষ্ট টোনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নতিকরণ, বিদ্যাধরী খাল সংস্কার ও পাড় বরাবর রাস্তা তৈরি, গ্রামীণ রাস্তা সংস্কার, স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে থেকে হাজার জনকে বেছে নিয়ে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং চাকরির উপযোগী প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করা, হিমঘর নির্মাণ, নতুনহাট এলাকায় নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো-সহ বিভিন্ন বিষয়ের উল্লেখ ছিল চুক্তিতে।

ইতিমধ্যে পাওয়ার গ্রিড প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জমি কমিটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি অনুযায়ী ইতিমধ্যে ক্ষতিপূরণের ১২ কোটি টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। ১০ শয্যার টোনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নতি হয়েছে। লাউহাটি-হাড়োয়া রোড-সহ বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তা সংস্কার হয়েছে। জমি কমিটির বিরুদ্ধে ৭৭টি মামলার মধ্যে ৬৯টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে, বাকি ৮টি মামলার তদন্ত চলছে। দক্ষতা বৃদ্ধি ও চাকরির উপযোগী প্রশিক্ষণের সহায়তা বাবদ ৪ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে, হিমঘর তৈরির জন্য জমি কেনার কাজ শেষ করে সীমানা-পাঁচিল নির্মাণের কাজ চলছে।

বিদ্যাধরী খাল সংস্কারের বিষয়ে পরিবেশ দফতর ও সেচ দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখনই সংস্কার করার প্রয়োজন নেই। এলাকার জল নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। দাবি অনুযায়ী রাস্তায় আলো লাগানো হয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রশাসন।

এ বিষয়ে জমি কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মির্জা হাসান বলেন, ‘‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী হিমঘর তৈরির কাজ শুরু হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। চুক্তি অনুযায়ী, এখনও বেশ কিছু কাজ বাকি আছে। টোনা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নতিকরণ করা হলেও সেখানে অস্ত্রোপচার করে প্রসবের ব্যবস্থা হয়নি। এখনও বিদ্যাধরী খাল সংস্কারের কাজ করা হয়নি। যদিও চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’

এ বিষয়ে জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা জানান, ইতিমধ্যে ক্ষতিপূরণের ১২ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। জমি কমিটির চুক্তি অনুযায়ী অধিকাংশ কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে। সামান্য কিছু কাজ, যেগুলি বাকি, তা সম্পূর্ণ করার জন্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement