আফগানিস্তান থেকে গ্রামে ফিরে নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা করছেন তিন যুবক। গোপালনগর থানার রামশঙ্করপুর গ্রামে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
অশান্ত আফগানিস্তান থেকে প্রাণ হাতে ওঁরা ফিরেছিলেন দেশে। গিয়েছিলেন জীবিকার টানে। রোজগারও ভাল হত। ঘরে ফিরে মাস পেরিয়ে গেলেও উপযুক্ত কাজ পাননি কেউ। কেউ কাজ পেলেও বেতন পাচ্ছেন আফগান মুলুকের থেকে তিন ভাগেরও কম। সুযোগ পেলে ফের বিদেশে পাড়ি দেবেন বলে জানাচ্ছেন এই যুবকেরা।
মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যার কথা ভেবে স্থানীয় ভাবে কর্মসংস্থানের আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু সেই আশ্বাসে কতটা বদলাবে বাস্তব পরিস্থিতি, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
কাবুল বিমান বন্দরে আমেরিকান সৈন্যদের খাবার পরিবেশনের কাজ করতেন বনগাঁ থানার খারুয়া রাজাপুর এলাকার বাসিন্দা অভিজিৎ সরকার। তালিবানের উত্থানের সময়ে কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে গোলাগুলির শব্দ এখনও কানে ভাসে তাঁর। প্রাণে বেঁচে বাড়ি ফেরায় স্বস্তিতে। কিন্তু হলে কী হবে, মাসে হাজার ৪০ টাকা রোজগার পুরোপুরি বন্ধ। তেমন কোনও কাজই পাননি এখনও অভিজিৎ। ভাল কাজের সন্ধানে মাস দেড়েক ধরে ছোটাছুটিও কম করেননি বলে জানালেন। কয়েক জায়গায় আশা দেখেছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেখানে কাজ শুরু হওয়ার আশা নেই।
অভিজিতের কথায়, ‘‘এখানে কাজ না পেলে আবার বাধ্য হব বিদেশে যেতে। কিছু তো একটা করতে হবে।’’ পরিবারের লোকজন অবশ্য চান, ছেলে বাড়িতেই থাকুক।
অশোকনগরের আস্রাফাবাদ এলাকার বাসিন্দা সুজয় দেবনাথের পরিবারে ৬ জন সদস্য। কাবুলে রান্নার কাজ করতেন। মাসে ৩৭ হাজার টাকা রোজগারে সুদিন ফিরছিল। কিন্তু তালিবানের হাত শক্ত হতেই প্রাণ হাতে দেশে ফিরে এসেছিলেন তিনিও।
মূলত সুজয়ের আয়েই সংসার চলে। বাবা অল্প বেতনের কর্মচারী। তিনি অসুস্থও। ওষুধপত্রের খরচ আছে। সুজয়ের তিন বছরের সন্তান আছে। সব মিলিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সুজয়। এখনও মনে মতো কাজ মলেনি বলে জানালেন। এক ইলেকট্রিক মিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। দিনে সাড়ে ৩০০ টাকা মেলে। তবে রোজ কাজ থাকে না।
আফগানিস্তানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেখানেও ফিরতে আপত্তি নেই সুজয়ের। ভাল টাকা আয় করতে হলে অন্তত ভিন্ রাজ্যে যে যেতেই হবে, তা মোটামুটি ধরেই রেখেছেন তিনি। কাবুল থেকে ফেরা বনগাঁর আর এক যুবক জানালেন, খেতমজুরি বা দিনমজুরি ছাড়া স্থানীয় ভাবে অন্য কাজ নেই। সেই কাজও নিয়মিত থাকে না। অথচ ভিন্ দেশে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা রোজগার করতেন। ফের বাইরে যেতে চেয়ে যোগাযোগ শুরু করেছেন তিনি।
কাজ শুরু করেছেন অশোকনগরের বনবনিয়া এলাকার অজয় মজুমদার। তিনিও কাবুলে খাবার পরিবেশনের কাজ করতেন। কাবুলে থাকাকালীন মাসে আয় ছিল ৪০-৪৫ হাজার টাকা। সেখান থেকে ফিরে কিছুদিন বাড়িতে ছিলেন। পরে সুরাতে একটি হোটেলে কাজ পান। এখন সেখানেই আছেন। তবে রোজগার অনেকটাই কম, মাসে ১৫ হাজার টাকা। অজয় বলেন, ‘‘এই টাকাটাও এলাকায় পাচ্ছিলাম না। তাই চলে এলাম। ভবিষ্যতে ভাল বেতনের কাজ পেলে আবার বিদেশেও যেতে রাজি আছি।’’
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে ফিরে তাঁদের কাছে কেউ কাজের আবেদন করেননি। কাবুল-ফেরত এক যুবকের কথায়, ‘‘আবেদন করেই বা কী হত? একশো দিনের কাজের মাটি কাটার কাজ তো কোনও দিন করিনি। আর ওই ক’টা টাকায় সংসার চলবে না। অন্য দেশে বা অন্য রাজ্যে গিয়ে যদি বেশি টাকা রোজগার করতে পারি, তা হলে সে পথই বেছে নিতে হবে। আমাদের মতো মানুষের কপালে বাড়ির ভাত লেখা নেই!’’