সরব: দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ গ্রামবাসীদের। নিজস্ব চিত্র
ভুয়ো জবকার্ড তৈরি করে সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল একশো দিনের কাজের প্রকল্পের সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে। বাগদার আষাঢ়ু পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সুপারভাইজার বিকাশ মণ্ডল দীর্ঘদিন ধরেই ভুয়ো জবকার্ড তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে দিন কয়েক আগে আষাঢ়ুর চাপারুই গ্রামের বাসিন্দারা জেলাশাসক, বিডিও-সহ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চিঠি দেন।
দিন কয়েক আগে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বিকাশকে শো-কজ় করা হয়। পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, বিকাশ সদুত্তর দিতে পারেননি। বাগদার বিডিও সৌমেন্দু গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “বিকাশকে ইতিমধ্যেই কাজ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। কয়েকটি ভুয়ো জবকার্ড মিলেছে। বিকাশ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ স্বীকারও করেছেন।”
পঞ্চায়েতের প্রধান সরস্বতী মুন্ডা বলেন, “ওঁর বিরুদ্ধে তদন্তে নেমে ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া গিয়েছে। ইতিমধ্যেই তিনটি ভুয়ো জবকার্ড বাতিল করা হয়েছে। আরও কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকলে পদক্ষেপ করা হবে।”
বিকাশের সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে দাবি করা হয়েছে, রাজনৈতিক কারণেই তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে।
গ্রামবাসীরা জানান, মারা গিয়েছেন, এলাকায় থাকেন না— এমন অনেকের নামে জবকার্ড তৈরি করে টাকা তোলা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, উজ্বল মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির নামে জবকার্ড তৈরি করে টাকা তোলা হয়েছে। উজ্জ্বল মারা গিয়েছেন চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। উজ্জ্বলের কাকা জয়দেব বলেন, “আমার ভাইপোর মৃত্যুর পরে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর নামে ভুয়ো জবকার্ড তৈরি করে টাকা তোলা হয়েছে।” সোমা মণ্ডলের নামেও সম্প্রতি টাকা তোলা হয়েছে বলে অভিযোগ। কিন্তু কয়েক বছর আগে সোমার বিয়ে হয়েছে নদিয়ার চাকদহ থানা এলাকায়। হরিদাস মণ্ডল নামে এলাকার এক প্রাক্তন বিএসএফ কর্মীর নামেও ভুয়ো জবকার্ড তৈরি করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। হরিদাস বলেন, “আমার নামে জবকার্ড তৈরি করে টাকা তোলা হয়েছে। তবে কার্ডে ছবি অন্য লোকের।”
এমনই অসংখ্য অভিযোগ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এলাকায়। গ্রামবাসীর দাবি, নিজের পরিবারের সদস্যদের নামেও বিকাশ জবকার্ড তৈরি করেছিলেন। নিজের নাবালিকা মেয়ের বয়স ১৮ বছর দেখিয়ে তার নামেও জবকার্ড করা হয়েছিল। ভুয়ো প্রকল্পের খতিয়ান দেখিয়েও টাকা তোলা হয়েছে। যে সব প্রকল্পে মাটি কাটা হয়েছে। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, পুরো ঘটনায় বিকাশ ছাড়াও কিছু ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তির হাত আছে।
বিরোধীরা এই ঘটনায় সরব। বিজেপির অভিযোগ, ব্লকের অন্যান্য পঞ্চায়েতেও জবকার্ড নিয়ে দুর্নীতি চলছে। বিজেপি নেতা তথা বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অমৃতলাল বিশ্বাস বলেন, ‘‘তৃণমূলের একাংশ এ সবের সঙ্গে জড়িত। সাহস থাকলে ব্লক জুড়ে জবকার্ড দুর্নীতির তদন্ত করুক প্রশাসন।”
তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি গোপাল শেঠ বলেন, “কেউ দুর্নীতি করলে প্রশাসন পদক্ষেপ করবে। দল প্রশ্রয় দেবে না। তবে আমরা খবর পেয়েছি, সারা বছর তৃণমূল করে বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে সমর্থন করা অনেকে এই দুর্নীতিতে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতেও প্রশাসনকে বলব।”