থমকে: বন্ধের মুখে বসিরহাটের বহু ইটভাটা। নিজস্ব চিত্র।
করোনা পরিস্থিতিতে হোঁচট খেয়েছে নির্মাণ শিল্প। এই পরিস্থিতিতে তলানিতে ঠেকেছে ইট বিক্রি। ফলে বসিরহাটের অনেক ব্যবসায়ী ভাটা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরে জেরে কাজ হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন ইটভাটার বহু শ্রমিক।
বসিরহাট মহকুমায় ইটভাটার সংখ্যা ৫৭৯টি। ১০টি ব্লক জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে ভাটাগুলি। ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কাঠকয়লা সরবরাহকারী মিলে মহকুমায় ইটভাটা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত লক্ষাধিক মানুষ। ইট ব্যবসায়ীরা জানান, ইট তৈরির খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে বহু নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় চাহিদা একেবারেই তলানিতে। ইটের দাম কমিয়েও ক্রেতা মিলছে না। লক্ষ লক্ষ ইট তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে ভাটাগুলিতে। খরচ সামাল দিতে না পেরে অনেকেই ভাটা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ইটভাটায় অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান কয়লা। গত বছর টন প্রতি ৯ হাজার টাকায় কয়লা মিলত। এ বার এক ধাক্কায় সেই দাম বেড়ে টন প্রতি ১৭ হাজার টাকা হয়েছে। ওভারলোডিংয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় ইটবহনকারী গাড়ির ভাড়া বেড়েছে। পাশাপাশি ডিজেলের দাম বাড়ার ফলেও পরিবহণ খরচ অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।
কিন্তু এত কিছুর পরেও ইটের দাম কমেছে। গত বছর এক হাজার ইট বিক্রি হয়েছিল ৮-৯ হাজার টাকায়। এ বার সেই দাম কমে দাঁড়িয়েছে ৬-৭ হাজারে। তা-ও ক্রেতার দেখা নেই বলে জানাচ্ছেন ইট ব্যবসায়ীরা।
বসিরহাটের এক ভাটামালিক ফজের আলি বলেন, “এখনও উৎপাদিত ইটের ৭০ শতাংশ অবিক্রিত রয়ে গিয়েছে। এ দিকে ভাটা চালু রাখতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। তাই আপাতত ইটভাটা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।” বসিরহাট ধলতিথা ব্রিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ সম্পাদক সুব্রত দে জানান, ইতিমধ্যে ২০-২৫টি ভাটা বন্ধ করে দেওয়ার কথা লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিপদে পড়েছেন ভাটা শ্রমিক ও ইট ভাটার কাজে পরোক্ষ ভাবে যুক্ত বহু মানুষ। বছরের এই সময়টায় প্রতিটি ভাটায় মালিকদের কাছ থেকে অগ্রিম পান শ্রমিকেরা। অভিযোগ, এ বার বকেয়া টাকাই দিতে চাইছেন না মালিকপক্ষ। অনেক জায়গায় শ্রমিকদের অর্ধেক পারিশ্রমিকে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
ইটভাটার শ্রমিক গগন সর্দার, পারুল মুন্ডা, রতন কাহাররা ভাটাতে থেকে, কাজ করে সংসার চালান। তাঁদের আশঙ্কা, ভাটা বন্ধ হয়ে গেলে না খেয়ে মরতে হবে। সুব্রত সাহা বলেন, “গত বছর ইট বিক্রি করে লাভ হওয়ায় অনেকে মেছোভেড়ি বন্ধ করে ভাটার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু এ বার প্রায় বিক্রি নেই। খরচ চালাতে না পেরে অনেকে ইটভাটা বন্ধ করে দিতে চাইছেন। এক-একটা ভাটার সঙ্গে প্রায় পাঁচশো পরিবার যুক্ত। ভাটা বন্ধ হলে বিশেষ করে শ্রমিকদের অবস্থা শোচনীয় হবে।”