বন্ধ চটকল। ইনসেটে জখম মনোজ চৌধুরী। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
বিজেপির এক শ্রমিক নেতাকে মারধরের ঘটনায় গ্রেফতার করা হল তৃণমূলের এক নেতাকে। আর তার জেরে বৃহস্পতিবার উৎপাদন বন্ধ হল জগদ্দলের একটি চটকলে। অভিযোগ, বিজেপির শ্রমিকেরা এ দিন চটকলের গেট আটকে অন্য শ্রমিকদের ঢুকতে বাধা দেয়। চটকল কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে তাঁদের।
এমনিতেই নানান সমস্যায় জর্জরিত চটকল শিল্প। কারণে-অকারণে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। তারই মধ্যে রাজনৈতিক গোলমালকে হাতিয়ার করে চটকলে উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা। তাঁরা চান, অবিলম্বে কাজ চালু হোক কারখানায়।
ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ বলেন, ‘‘বিজেপির নেতাকে মারলে দলের শ্রমিকেরা কেন মিল চালু করতে দেবে? আর তৃণমূলের ক’জন শ্রমিক আছে? ওদের ইউনিয়নে কোনও লোক নেই বলেই তো এমন মারপিট করছে ওরা। শুক্রবার চটকল চালু হয়ে যাবে।’’
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার রাতে। জগদ্দলের অকল্যান্ড জুটমিলের বিজেপির শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মনোজ চৌধুরীর বাড়িতে কয়েকজন দুষ্কৃতী চড়াও হয়। মনোজের পরিবারের অভিযোগ, ভাটপাড়ার তৃণমূল নেতা সঞ্জয় সিংহের ভাই প্রমোদ সিংহ দুষ্কৃতীদের নেতৃত্বে ছিলেন। অভিযোগ, তারা সকলেই সশস্ত্র ছিল।
অভিযোগ, প্রমোদের নেতৃত্বে দুষ্কৃতীরা মনোজকে বাড়ি থেকে বের করে লাঠি-লোহার রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। জখম অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ভাটপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, পরে তাঁকে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি।
ওই রাতেই মনোজের বাড়ির লোকেরা জগদ্দল থানায় প্রমোদ এবং আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। রাতেই পুলিশ প্রমোদের বাড়ি থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করা হয় আরও দু’জনকে। এই ঘটনায় তৃণমূল তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। আপাতত তারা ধীরে চলো নীতিই নিয়েছে।
বুধবার রাত থেকেই আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিল বিজেপি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অকল্যান্ড জুট মিলের সামনে বসে পড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন শুরু করেন বিজেপির শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস)। তার ফলে শ্রমিকেরা চটকলের ভিতরে ঢুকতে পারেননি। কাজে যোগ দিতে পারেননি তিন শিফটের প্রায় চার হাজার শ্রমিক।
কারখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য বিএমএস-এর আন্দোলনের কথা স্বীকার করেননি। তাঁরা জানান, চটকলের ভিতরে কোনও গোলমাল বা আন্দোলন হয়নি। কোনও শ্রমিক এদিন কাজে আসেননি। তার ফলে উৎপাদন মার খেয়েছে। সব মিলিয়ে লোকসানের পরিমাণ কয়েক লক্ষ টাকা। মারধরের ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিজেপি-তৃণমূলের তরজা শুরু হয়ে যায়। তৃণমূল নেতা সোমনাথ শ্যাম বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে মনোজ চৌধুরী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। সংগঠনে তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতারা তা নিয়ে ক্ষুব্ধ। সেই গোলমালের জেরেই নিজের সংগঠনের নেতারাই তাঁকে মারধর করেছে। কিন্তু বদলা নিতে তারা আমাদের নেতা-কর্মীদের নামে অভিযোগ দায়ের করেছে।’’তিনি জানান, আইন আইনের পথে চলবে। আদলতে প্রমোদ ন্যায় পাবেন। অর্জুন অবশ্য দাবি করেন, ওই চটকলে মনোজ ক্রমশ অবিসংবাদিত নেতা হয়ে উঠছিলেন। তাঁকে থামাতেই মারধর করা হয়েছে।ওই কারখানায় শ্রমিকদের সিংহভাগই চুক্তি বা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিযুক্ত। কাজ না হলে তাঁরা মজুরি পান না। এ দিন কাজ না হওয়ায় তাঁরা বিপাকে পড়লেন বলে জানা বেশ কিছু শ্রমিক। তবে অর্জুন জানান, বৃহস্পতিবার চটকলে কাজ হবে।