অভাব ও অপুষ্টির এই ছবি রাধাকৃষ্ণপুরের ঘরে ঘরে
মাসখানেক বেঁচে ছিল শিশুকন্যাটি।
সাগরের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ওই শিশুর মা গর্ভাবস্থায় ভুগছিলেন অপুষ্টিতে। না মিলেছিল স্বাস্থ্যকর খাবার, না ওষুধপত্র। নিজেই ভুগছিলেন নানা শারীরিক সমস্যায়।
প্রসবের পরে সন্তানও পুরোপুরি সুস্থ ছিল না। ক্রমশ রুগ্ন হতে থাকে। মাসখানেকের মধ্যেই মৃত্যু হয় মেয়ের। সন্তানহারা মায়ের কথায়, ‘‘নিজেদেরই ঠিক মতো খাবার জোটে না। মেয়েটাকেও ভালমন্দ খাওয়াতে পারিনি। বাঁচাতে পারলাম না।”
অভাব ও অপুষ্টির এই ছবি রাধাকৃষ্ণপুরের ঘরে ঘরে। রেশনের চালটুকুই ভরসা গ্রামের বহু মানুষের। অনেকের আবার তা-ও জোটে না। এক বাসিন্দা জানালেন, নিয়মিত আনাজ-পাতি, তেল-মশলা কেনার সামর্থ্য নেই। তাই ফ্যান-ভাত বা শাক-ভাতেই পেট ভরাতে হয়। মাঝে মধ্যে নদী থেকে মাছ-কাঁকড়া জুটলে, সেদিন একটু তৃপ্তি করে খান সকলে।
অপুষ্টির শিকার গ্রামের বহু শিশু-বৃদ্ধ। রক্তাল্পতা, জন্ডিসেও আক্রান্ত অনেকে। রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে বেশ কয়েক ঘর আদিবাসী পরিবারের বাস। লোধা সম্প্রদায়ের অনেকের দাবি, সরকারি সুযোগ-সুবিধা, পুষ্টিকর খাবার, স্বাস্থ্য পরিষেবা কোনওটাই জোটে না।
মঙ্গলবার আদিবাসীপাড়ায় গিয়ে দেখা হল গীতা ভক্তার সঙ্গে। বললেন, “আমাদের এখানে সকলের রেশন কার্ডই নেই। চালটুকুও পাই না। খুবই অনটনে দিন কাটে। বাড়ির বাচ্চাগুলোকেও দু’বেলা ঠিক করে খেতে দিতে পারি না।” আধপেটা খেয়ে বহু রাতে ঘুম আসে না বলে জানালেন তিনি। গ্রামের বাসিন্দা আরতি ভক্তা বলেন, “স্বামী অসুস্থতার কারণে কাজ করতে পারেন না। সরকারি সাহায্যও তেমন পাই না। কষ্টের মধ্যে আছি।”
রাধাকৃষ্ণপুর, খাসরামকর, সুমতিনগর, বঙ্কিমনগর, কৃষ্ণনগরের পশ্চিমঘেরি ও ঘোলাপাড়া, বকুলতলা, ক্ষীরকুলতলা, কীর্তনখালি-সহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ এ ভাবেই দারিদ্রকে সঙ্গী করে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে জানালেন, অতিমারি পরিস্থিতিতে গ্রামের বাইরে গিয়ে কাজের সুযোগ কমেছে। গ্রামেও তেমন কাজ নেই। বহু জমিতে চাষ হচ্ছে না। ফলে রোজগার নেই অধিকাংশ পরিবারের। দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোটাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে। আধ-পেটা খেয়ে বেঁচে থাকা অভ্যাস করে নিয়েছেন অনেকে।
মাথা গোঁজার ঠাঁইও নেই অনেকের। শৌচকর্মের জন্য এখনও ভরসা খোলা মাঠ বা বন-বাদার। কীর্তনখালি গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, এলাকার অনেকে আবেদন করেও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ঘর পাননি। তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও, পঞ্চায়েত থেকে শৌচালয় মেলেনি।
সাগরের বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, “সাগর ব্লকে গত দশ বছরে রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে পানীয় জলের ব্যবস্থা, আবাস যোজনার ঘর— সবই হয়েছে। কোথাও হয় তো ছোটখাটো সমস্যা রয়েছে। সেখানকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব।” বিডিও সুদীপ্ত মণ্ডলের দাবি, “এখানে কাজের অভাব নেই। কেউ কাজ না পেলে বা সরকারি সুযোগ-সুবিধা না পেলে ব্লক অফিসে এসে যোগাযোগ করতে পারেন।”