মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হাওড়ার সাঁতরাগাছি থেকে বুধবার রাজ্য জুড়ে একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই জেলারও একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন তিনি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে ‘মর্ডার্ন বাস টার্মিনাস’-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে বিধানসভা ভোটের সময়েও এক বার এই বাস স্ট্যান্ডের উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। কিন্তু বেশ কিছু কাজ বাকি থাকায় টার্মিনাস চালু করা যায়নি। প্রশাসন সূত্রের খবর, টার্মিনাসের জন্য প্রাথমিক ভাবে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু
সেই টাকায় পুরো কাজ শেষ করা যায়নি। পরে অবশিষ্ট কাজের জন্য দ্বিতায় দফায় প্রায় ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। এ দিন সেই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেরই উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। স্থানীয় বিধায়ক পরেশরাম দাস জানান, দ্রুত বাস টার্মিনাসের কাজ শেষ করা হবে।
পাথরপ্রতিমায় দু’টি পনটুন জেটির (যে জেটি দিয়ে জলপথে গাড়ি পারাপার করতে পারে) উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। উদ্বোধন হলেও, জেটি তৈরির কাজ অবশ্য সম্পূর্ণ নয়। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বিরাট বাজার এলাকা থেকে বনশ্যামনগর পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে একটি জেটি। অন্য জেটি তৈরি হচ্ছে জি-প্লট পঞ্চায়েতের গঙ্গার ঘাট থেকে চাঁদমারি ঘাট পর্যন্ত। প্রথম জেটি তৈরিতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। দ্বিতায় জেটির খরচ প্রায় ১২ কোটি টাকা। স্থানীয় বিধায়ক সমীরকুমার জানা জানান, দু’টি জেটির কাজ দ্রুত শেষ হবে। জেটি তৈরি হলে কলকাতা থেকে গাড়িতে সরাসরি পাথরপ্রতিমার গোবর্ধনপুর পৌঁছে যাওয়া যাবে। ফলে এলাকার পর্যটন বাড়বে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নও ঘটবে।
এ দিন ডায়মন্ড হারবারে রাজ্য আবাসন দফতরের একটি চারতলা ভবনের উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ডায়মন্ড হারবার ১ ব্লকে জেটিঘাট মোড়ের কাছে এই ভবনটি জেলায় কর্মরত সরকারি কর্মীদের থাকার জন্য তৈরি হয়েছে। ১৬টি পরিবার
থাকতে পারবে। প্রশাসন সূত্রের খবর, ভবন তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা।
ক্যানিং ২ ব্লকের দু’টি বাজারের সিসি ক্যামেরার উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দেউলি বাজারে প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ও জীবনতলা
বাজারে প্রায় ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে
সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, বাজার এলাকায় ক্যামেরা লাগানোর ফলে নজরদারি বাড়িবে। অপরাধমূলক কাজকর্ম কমবে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ভার্চুয়াল উদ্বোধনের সময়ে জীবনতলায় উপস্থিত ছিলেন বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি,
ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকাত মোল্লা, ক্যানিং ২ বিডিও ওয়াসিদ খান, ওসি প্রদীপ পাল।
ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সওকাত মোল্লা বলেন, “কেন্দ্রীয় বঞ্চনা সত্ত্বেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের জন্য ধারাবাহিক ভাবে একটার পর একটা প্রকল্পের বাস্তবায়ন করে চলেছেন। এ দিকে কেন্দ্র রাজ্যের প্রাপ্য টাকা না দিয়ে ভাতে মারার
চেষ্টা করছে। কিন্তু রাজ্য সরকার
নিজস্ব তহবিল থেকেই উন্নয়নমূলক কাজ করছে।”
উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের নেবুখালি ও দুলদুলির দু’টি ভেসেল ঘাট সংস্কারের কাজেরও উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে এই কাজের জন্য। দ্রুত কাজ শুরু হবে।
লোকসভা ভোটের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প উদ্বোধনকে নির্বাচনী ‘গিমিক’ বলে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য
সুনীপ দাস বলেন, “এ রাজ্যে শুধু উদ্বোধনই হয়, কাজের কাজ হয় না। টাকা সব তৃণমূলের নেতাদের
পকেটে ঢোকে। এ সব ভোটের
মুখে মুখ্যমন্ত্রীর ভাঁওতাবাজি।’’
তাঁর তির্যক মন্তব্য, ‘‘তা-ও ভাল, ভার্চুয়ালি সব এক সঙ্গে উদ্বোধন করেছেন। না হলে এই উদ্বোধনের নামেই নেতারা লক্ষ লক্ষ সরকারি টাকা লুটে নিতেন!”