এই রাস্তা তৈরি নিয়েই গোলমাল। —নিজস্ব চিত্র
ভোটের মুখে গ্রামেগঞ্জে রাস্তা সংস্কারকে গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী পথশ্রী প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। এ দিকে, তাঁরই দলের গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে বন্ধ হয়ে গেল ঢালাই রাস্তা তৈরির কাজ। তৃণমূলের একটি সূত্রের অভিযোগ, রাস্তা তৈরির কাজের জন্য তোলা চাওয়া হয়েছিল। তা নিয়েই দু’পক্ষের গোলমাল।
ভাঙড় ২ ব্লকের বেঁওতা ১ পঞ্চায়েতের উদ্যোগে গাজিপাড়া এলাকায় পথশ্রী প্রকল্পে শুরু হয়েছে ঢালাই রাস্তার কাজ। কিন্তু নিম্নমানের কাজ হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর নেতারা। ভাঙড় ২ বিডিও কৌশিককুমার মাইতি বলেন, ‘‘এ রকম একটি ঘটনার কথা শুনেছি। কী কারণে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯০ মিটার লম্বা, ৮ ফুট চওড়া এবং ৪ ইঞ্চি উচ্চতার ঢালাই রাস্তা তৈরি করার জন্য পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কাজের বরাত পান সমর মণ্ডল নামে এক ঠিকাদার। অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে সমরের পরিবর্তে রাস্তা তৈরির কাজ দেখভাল করছিলেন স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা তাপস মণ্ডল। বিষয়টি গাত্রদাহের কারণ হয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের। তৃণমূল নেতা নাসির মোল্লা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযোগ তোলেন, নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। লোকজন এনে তিনি কাজ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। শুক্রবার ওই ঘটনায় নাসির ও তাঁর লোকজন শ্রমিকদের ধাক্কাধাক্কি করেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। নাসির বলেন, ‘‘ওই রাস্তার কাজের বরাত পেয়েছিলেন ঠিকাদার সমর মণ্ডল। স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা তাপস মণ্ডল নিজের প্রভাব খাটিয়ে সেই কাজ করছিলেন। অত্যন্ত নিম্নমানের রাস্তার কাজ হচ্ছিল বলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। ৪ ইঞ্চি ঢালাই দেওয়ার পরিবর্তে ২-৩ ইঞ্চি ঢালাই দেওয়া হচ্ছিল। ৮ ফুট রাস্তা চওড়া করার পরিবর্তে ৭ থেকে সাড়ে ৭ ফুট চওড়া হচ্ছিল। এ সব নিয়ে ক্ষোভের জেরে এলাকার মানুষ রাস্তার কাজে বাধা দেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমার নামে তোলা চাওয়ার মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে আমি কোনও ভাবেই জড়িত নই।’’
এ বিষয়ে এলাকার যুব তৃণমূল নেতা তাপস মণ্ডল বলেন, ‘‘রাস্তার কাজের জন্য কিছু লোক তোলা চেয়েছিল বলে শুনেছি। দলেরই কিছু লোকজন মস্তানি করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।’’ তাঁর দাবি, রাস্তা তৈরির দেখভালের দায়িত্বে তিনি নেই। এলাকার নেতা হিসেবে শুধু কাজ দেখতে গিয়েছিলেন।
বেঁওতা ১ পঞ্চায়েতের প্রধান আবু সুফিয়ান তরফদার বলেন, ‘‘পথশ্রী প্রকল্পে ওই রাস্তার কাজের উদ্বোধন করে আমি চলে এসেছিলাম। পরে শুনলাম, নিম্নমানের কাজ হচ্ছে বলে গ্রামের কিছু লোকজন কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। কেউ তোলা চেয়েছে কিনা আমি জানি না। তবে অবিলম্বে প্রশাসনের লোকজনকে নিয়ে গিয়ে রাস্তার কাজ শুরু করার ব্যবস্থা করব।’’
এই ঘটনার সঙ্গে দলের কেউ জড়িত কিনা, তা জানা নেই বলেও দাবি করেছেন প্রধান। তবে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনে দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানানোর কথা বলেছেন।
গোটা ঘটনায় শাসকদলকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তুষার ঘোষ বলেন, ‘‘সর্বত্র টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ওদের গন্ডগোল। যে কারণে থমকে যাচ্ছে উন্নয়নের কাজ। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা।’’