প্রস্তুতি: মন্ত্রী আসছেন। বাড়তি ব্যস্ততা প্রকল্প এলাকায়। ছবি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি
কেন্দ্রীয় তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের আজ, রবিবার আসার কথা অশোকনগরে তেল ও গ্যাস প্রকল্প এলাকায়। মন্ত্রীর আসার কথা জানতে পেরে প্রকল্প এলাকায় এত দিন চাষাবাদ মানুষের আশা করছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশ্চয়ই তাঁদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে আশ্বাস দেবেন। বিক্রম মণ্ডল নামে এক যুবকের কথায়, ‘‘প্রকল্প এলাকায় আমাদের ২ বিঘে জমি ছিল। চাষবাস করতাম। আমাদের বিকল্প আয়ের সংস্থান নেই। এখানে প্রকল্প গড়ে উঠুক আমরাও চাই। তবে আমাদের আর্থিক ভাবে ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হোক। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আসবেন শুনছি। তিনি আমাদের কী আশ্বাস দেন, আমরা সে দিকে তাকিয়ে রয়েছি।’’
কিন্তু জমি তো খাস। এ বিষয় বিক্রম বলেন, ‘‘সরকারের পক্ষ থেকে এলাকাটি গর্ভমেন্ট কলোনি হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। আমাদের জমির রসিদ আছে।’’
শনিবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, হাবড়া-নৈহাটি সড়ক থেকে প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত নতুন রাস্তা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্প এলাকায় ঢোকার মুখে লোহার গেট বসানো হয়েছে। কর্মীদের মধ্যে ব্যস্ততা দেখা গেল। ভিতরে একটি জায়গায় বড় ছাউনি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের গাড়ি ঘনঘন যাতায়াত করছেন। চারিদিকে সাজ সাজ পরিবেশ।
তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রকল্পস্থলে চাষাবাদ করা মানুষদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও কর্মসংস্থানের দাবিতে সিপিএমের ছাত্র যুব সংগঠনের তরফে এলাকায় পদযাত্রা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে ইমেল করে চিঠি দিয়েছিল এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই। অশোকনগরকে ‘দ্বিতীয় সিঙ্গুর’ তৈরি করা যাবে না— এই দাবিও তুলেছে সিপিএম। পাশাপাশি সিপিএম নেতৃত্ব চাষিদের প্রকল্পের গুরুত্ব বোঝাচ্ছেন।
তেলমন্ত্রীর কাছে সিপিএম রবিবার স্মারকলিপি দেবে বলে জানিয়েছে। দলের অশোকনগর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সত্যসেবী কর বলেন, ‘‘তেলমন্ত্রীর কাছে আমরা স্মারকলিপি দিতে যাব। এই প্রকল্প ঘিরে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা। স্থানীয়দের যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজ দেওয়া এবং কৃষকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করব।’’ এ দিকে, অশোকনগর-কল্যাণগড়ের পুরপ্রশাসক প্রবোধ সরকার জানান, পুরসভার পক্ষ থেকে শনিবার ওএনজিসি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রবোধ বলেন, ‘‘প্রকল্পের কাজকর্ম সম্পর্কে আমরা অন্ধকারে। সে বিষয়ে আলোচনা করতে চিঠি দিয়েছি।’’ মন্ত্রীর কর্মসূচি প্রসঙ্গে প্রবোধ বলেন, ‘‘আমাদের কেউ আমন্ত্রণ করেননি। করলে দলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। প্রকল্পের জন্য জমির ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। পুরসভা থেকে নো অবজেকশন দিয়েছি।’’ বিজেপির অশোকনগর বিধানসভা কেন্দ্রের আহ্বায়ক স্বপন দে বলেন, ‘‘তেলপ্রকল্পটির ফলে অশোকনগরের নাম বিশ্বের মানচিত্রে উঠে গিয়েছে। এলাকার বেকার সমস্যার সমাধান হচ্ছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশ্চয়ই মানুষকে বার্তা দেবেন।’’ বাইগাছি মৌজা ছাড়াও ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ সংলগ্ন হিজলিয়া মৌজাতেও জমির মাপজোক ও চিহ্নিতকরণের কাজ করছেন। দিন কয়েক আগে চাষিরা আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও কর্মসংস্থানের দাবি তুলে এলাকায় মিছিল করেন। পথ অবরোধ বিক্ষোভ হয়। স্থানীয় এক তৃণমূল নেতাকে সেখানে দেখা গিয়েছিল। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ওই নেতা ব্যক্তিগত ভাবে গিয়েছিলেন। দলের পক্ষ থেকে কাউকে পাঠানো হয়নি।
অশোকনগরের বাইগাছি মৌজায় তেল ও গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে ওএনজিসি। বাণিজ্যিক ভাবে তা উত্তোলনের তোড়জোড় চলছে। গত ছ’বছর ধরে পরীক্ষামূলক ভাবে ৪ একর জমিতে কাজ চলার পরে এ বার প্রয়োজন আরও সাড়ে ১০ একর জমি। ওই জমি চেয়ে ইতিমধ্যেই ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন। পুরসভার পক্ষ থেকে ওই জমির নো অবজেকশন ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওনএনজিসি কর্তৃপক্ষ যাতে জমি পান, তার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জমির বিষয়টি এখন রাজ্য সরকারের বিবেচনাধীন।’’ প্রকল্প এলাকায় বেশিরভাগই সরকারি খাসজমি। চাষ হয়। চাষিরা জানিয়েছেন, তাঁরাও চান প্রকল্প হোক। কিন্তু আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ওএনজিসি কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে আলোচনা না করায় তাঁরা বিভ্রান্ত।