পিএনবি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত মেহুল চোক্সী। ছবি: এক্স।
পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (পিএনবি) আর্থিক তছরুপ মামলায় অভিযুক্ত মেহুল চোকসী ক্যানসারে আক্রান্ত। ভারতের অনুরোধের পর তাঁকে গ্রেফতার করেছে বেলজিয়ামের পুলিশ। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বেলজিয়ামের আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন করা হবে, জানিয়েছেন চোকসীর আইনজীবী বিজয় আগরওয়াল। তাঁকে ভারতে প্রত্যর্পণের বিরোধিতাও করা হবে বেলজিয়ামের আদালতে।0
চোকসীর ক্যানসারের কথা ভারতের আদালতে আগেও জানিয়েছিলেন তাঁর আইনজীবীরা। সূত্রের খবর, বেলজিয়াম থেকে চিকিৎসার প্রয়োজনে সুইৎজ়ারল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। সেখানকার বিখ্যাত হাসপাতালে তাঁর ক্যানসারের চিকিৎসার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই বেলজিয়াম পুলিশ ৬৫ বছরের এই ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। ভারতের তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই চোকসীর গ্রেফতারি এবং প্রত্যর্পণের অনুরোধ করেছিল বেলজিয়ামকে। তাঁর বিরুদ্ধে মুম্বই আদালতের জারি করা দু’টি গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে বেলজিয়াম পুলিশ পদক্ষেপ করেছে।
সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকার আর্থিক তছরুপের অভিযোগ রয়েছে চোকসীর বিরুদ্ধে। ভারতে হীরের ব্যবসা ছিল তাঁর। ২০১৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করে পিএনবি। অভিযোগের ভিত্তিতে চোকসী এবং তাঁর সংস্থা গীতাঞ্জলি জেম্সের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত শুরু হয়। পরে তদন্তে নামে ইডিও। পিএনবির অভিযোগ, জাল নথি এবং চিঠি দেখিয়ে টাকা নিয়েছিলেন তিনি। যার জেরে ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের বিপুল ক্ষতি হয়। ইডি পরে জানায়, বেআইনি ভাবে বিদেশি অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করেছেন চোকসী। পিএনবি মামলায় মুম্বইয়ের আদালত গত ফেব্রুয়ারিতে চোকসীর সংস্থার ১৩টি সম্পত্তি নিলামে তোলার নির্দেশ দিয়েছিল।
আর্থিক প্রতারণা বিরোধী আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া, দুর্নীতিদমন আইন এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রতারণা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা রয়েছে চোকসীর বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান চোকসী। ওই বছরই ডিসেম্বরে তাঁর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস জারি করা হয়েছিল। ভারত থেকে পালানোর পর ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্র অ্যান্টিগা ও বারবুডায় দীর্ঘ দিন ছিলেন চোকসী। সেখানকার নাগরিকত্বও পান। তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে সেখানকার আদালত জানিয়েছিল, অ্যান্টিগা ও বারবুডা থেকে কোথাও চোকসীকে নিয়ে যাওয়া যাবে না।
এর পর রেড কর্নার নোটিস প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। ওই নোটিস তুলে নেওয়ার অর্থ হল, বিনা বাধায় পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে যেতে পারবেন চোকসী, কেবল ভারত ছাড়া। এর পরেই ২০২৩ সাল থেকে তিনি বেলজিয়ান স্ত্রীর সাহায্য নিয়ে ‘এফ রেসিডেন্সি কার্ড’ জোগাড় করে বেলজিয়ামে থাকতে শুরু করেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, অ্যান্টিগা ও বারবুডা থেকে বেরোনোর পর তাঁকে ভারতে ফেরানোর জন্য সিবিআই, ইডি ফের সক্রিয় হয়েছে। বেলজিয়াম সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাবার্তাও শুরু হয়েছে। চোকসী সেখানকার স্থায়ী নাগরিকত্ব পেয়ে গেলে তাঁকে দেশে ফেরানো আরও কঠিন হয়ে পড়বে।