Ration Corruption case

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়ে নোটিস পুলিশ-পুরসভাকে

সোমবার সকালে সিবিআইয়ের সঙ্গে ছিলেন সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞদের একটি দল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বনগাঁ, সন্দেশখালি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪ ০৭:২৯
Share:

শঙ্কর আঢ্যর স্ত্রী জ্যোৎস্নাকে সরকারি চিঠি তুলে দিচ্ছেন তদন্তকারী সিবিআই অফিসার। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

ফের বনগাঁয় এলেন সিবিআই অফিসারেরা। সোমবার সকাল ১১টা নাগাদ কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সঙ্গে নিয়ে বনগাঁ শহরের শিমূলতলা এলাকায় আসেন তাঁরা। এখানেই বাড়ি, রেশন দুর্নীতি মামলায় ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যের। সিবিআইয়ের সঙ্গে এ দিন ইডির দুই অফিসারও ছিলেন।

Advertisement

৫ জানুয়ারি সকাল থেকে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পরে রাতে বাড়ি থেকে ইডি শঙ্করকে গ্রেফতার করেছিল। গাড়িতে তোলার সময়ে আক্রান্ত হন ইডি আধিকারিক ও জওয়ানেরা। হাই কোর্টের নির্দেশে ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিবিআই অফিসারেরা শঙ্করের বাড়ির সামনে এসেছিলেন।

সোমবার সকালে সিবিআইয়ের সঙ্গে ছিলেন সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞদের একটি দল। তাঁরা শঙ্করের বাড়ির সামনে যে রাস্তায় হামলার ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ, সেখানকার ভিডিয়ো ও স্টিল ছবি তোলেন। সাদা কাগজে এলাকার নকশা এঁকে নিয়ে যান। ফিতে দিয়ে রাস্তা মাপজোক করেন। থ্রি-ডি ক্যামেরা বসিয়ে ছবি তোলা হয়। সে সময়ে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, শঙ্করের বাড়ির আশেপাশের সিসি ক্যামেরার ক্যামেরার সংযোগ কাটা রয়েছে। ওই ক্যামেরাগুলি বনগাঁ পুরসভা এবং বনগাঁ থানার দায়িত্বে। সোমবার ঘটনাস্থলে পৌঁছে সিসি ক্যামেরার পরিস্থিতি দেখার পরে বনগাঁ থানার আধিকারিক এবং পুরসভার চেয়ারম্যানকে নোটিস জারি করে সিবিআই। ৫ জানুয়ারি ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার যাবতীয় ফুটেজ আগামী ২০ মার্চের মধ্যে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য থানা ও পুরসভাকে নোটিস করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি।

শঙ্করের বাড়ি ও আশপাশের রাস্তায় একাধিক সিসি ক্যামেরা ছিল। তদন্তকারীদের দাবি, এ দিন গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব ক্যামেরার সংযোগকারী তার কাটা রয়েছে। এরপরেই নোটিস পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা।

বনগাঁর পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে বনগাঁ থানার আইসির কাছে নোটিস দেওয়া হয়েছে। উত্তর দিয়ে দেওয়া হবে।’’ পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, "পুরসভার নিয়ন্ত্রিত সিসি ক্যামেরা বনগাঁ শহরে আছে। তবে ওই এলাকায় পুরসভার কোনও সিসি ক্যামেরা নেই।"

এ দিন সিবিআই অফিসারেরা শঙ্করের বাড়িতে যান। শঙ্করের স্ত্রী তথা পুরসভার উপ পুরপ্রধান জ্যোৎস্না আঢ্যের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা জ্যোৎস্নার কাছে বাড়ির সিসি ক্যামেরার সে দিনের (৫ জানুয়ারি) ফুটেজ চান। জ্যোৎস্না তাঁদের জানান, ঘটনার দিন এক অফিসারের কথা মতো সিসি ক্যামেরা বন্ধ রাখা হয়েছিল। তারপরে তাঁরা মাসখানেক বাড়ি ছিলেন না। বাড়ি ফিরে সিসি ক্যামেরা চালু করেছেন। সিবিআই তাঁর কাছেও সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়ে নোটিস করেছে।

এক তদন্তকারী অফিসার জানান, বাড়ির বাইরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজই তদন্তে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শঙ্করের বাড়ির কাছেই থাকেন পুরপ্রধান গোপাল শেঠ। তাঁর বাড়ির নীচে সিসি ক্যামেরা আছে। সিবিআই অফিসারেরা গোপালের বাড়ি গিয়ে কথা বলেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সম্পর্কে জানতে চান। বেলা ২টো ৪০ মিনিট নাগাদ সিবিআই এলাকা ছাড়ে।

পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, "আমার কাছে সিবিআই সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেয়েছিল। মৌখিক ভাবে জানিয়ে দিয়েছি, আমার বাড়িতে থাকা সিসি ক্যামেরার মেমোরি ১৩ দিন, ২৫ দিন করে থাকে। এত পুরনো ফুটেজ নেই। যা আছে, তা দিয়ে দেওয়া হবে।"

সন্দেশখালি ১ ব্লকের সরবেড়িয়া আগারহাটি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের প্রধান শেখ শাহজাহানের ‘ডান হাত’ হিসেবে পরিচিত জিয়াউদ্দিন মোল্লাকে সিবিআই ডেকে পাঠাল। রবিবার রাতেই ডাক পান জিয়াউদ্দিন সহ সরবেড়িয়া আকুঞ্জিপাড়া এলাকার আরও ৫ জন। সোমবার সিবিআই দফতরে হাজির হতে বলা হয় তাঁদের। সেই মতো জিয়াউদ্দিন গিয়েছেন সিবিআইয়ের দফতরে। তাঁর বাড়ি লাউখালি গ্রামে। ৫ জানুয়ারি সকালে শেখ শাহজাহানের বাড়িতে রেশন দুর্নীতির তদন্তে আসা ইডি অফিসারদের উপরে হামলার ঘটনায় তদন্তে তাঁকে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। অভিযোগ, ইডির উপরে হামলার সময়ে ঘটনাস্থলে ছিলেন জিয়াউদ্দিন। তবে জিয়াউদ্দিন বিভিন্ন সময়ে দাবি করেন, তিনি গোলমাল থামাতে গিয়েছিলেন। ৫ জানুয়ারির পর থেকে জিয়াউদ্দিন গা ঢাকা দেন। পঞ্চায়েত অফিসেও যেতেন না বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। কয়েক মাস আগে সরবেড়িয়া এলাকায় পথ অবরোধ ও পুলিশের উপরে হামালর অভিযোগ ওঠে। জিয়াউদ্দিন সে সময়ে সন্দেশখালি ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement