ডায়মন্ড হারবারের পথে অভিষেকের বিরুদ্ধে সুর চড়ালেন শুভেন্দু। —ফাইল চিত্র।
‘‘গুজরাতে ২৭ বছরের বিজেপি সরকার। তৈরি থাকুন। আবার লাড্ডু বিলি হবে। আমি যা ধরি তা শেষ করে ছাড়ি। স্টার্টিংয়ে না ফিনিশিংয়ে বিশ্বাস করি।’’
শুভেন্দু বললেন, ‘‘কী করে করতে হয় আমি জানি। আমাদের যে সব কর্মীদের আহত করেছে, তাঁদের শুশ্রূষার দায়িত্ব আমার। আপনারা আইন হাতে তুলে নেবেন না। এর পর সভা করতে এলে আর ছোট গাড়িতে আসতে বলব না। পাঁচটি ট্রেন ভাড়া করতে বলব। আর হটুগঞ্জের মতো করলে... যদি ট্রেনের পাতের উপরে বসে আরপিএফের মার... অমবস্যা-পূর্ণিমায় কটকট করবে। ’’
শুভেন্দু বলেন,‘‘অবমাননা মামলা করব হাই কোর্টে। ছাড়ার কোনও জায়গা নেই। মনোজ মালব্য মহোদয়, মমতা ব্যানার্জির ভাষায় উত্তম কুমার— আপনাকেও ছাড়ার কোনও জায়গা নেই। কনটেম্পট পিটিশন ফাইল হবে। যত গাড়ির কাচ ভেঙেছেন, সরকারের কাছ থেকে টাকা আদায় করব। যত জন আহত হয়েছেন, ক্ষতিপূরণ আদায় করব। কী করে করতে হয় আমি জানি।’’
অভিষেককে নিশানা শুভেন্দুর। বললেন,‘‘সুদ আসলে ফেরত নেব, দণ্ডসুদও আদায় করব।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এখানকার সাংসদ সর্বভুক, তিনি কয়লা খান, বালি খান... স্কুলের ইউনিফর্ম খান। ৫০ হাজার চাকরি বেচেছেন।’’
‘‘আগে নেতারা বলতেন ‘কলকাতা চলো’। এখন পিসি-ভাইপো কথায় কথায় বলেন ‘কাঁথি চলো’। আতঙ্কের নাম শুভেন্দু অধিকারী।’’ ডায়মন্ড হারবারে লাইট হাউসের মাঠে মন্তব্য বিরোধী দলনেতার।
অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘‘প্রতিবাদে না কাজ হলে প্রতিরোধ, প্রতিরোধে কাজ না হলে প্রতিশোধ নিতে হবে। আমাদের কাজ সরকারের সমালোচনা করা। কিন্তু এখন একটা কথা বললে পুলিশ চলে আসবে বাড়িতে। ও দিকে মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় সংবিধান দিবস পালন করছেন।’’
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ বিজেপি নেতা সজল ঘোষের। বললেন, ‘‘প্রতিজ্ঞা করছি, বদল নয়, বদলা নেব।’’ বিজেপি কাউন্সিলর আরও বলেন, ‘‘এক একটা বিজেপি কর্মীর রক্ত ঝরার বদলা নেওয়া হবে। আসলে ওদের দিকে সিপিএমের শেষ সময় মনে পড়ছে।’’ এর পর মঞ্চে বক্তব্য রাখেন অগ্নিমিত্রা পাল। বিধায়কের হুঁশিয়ারি, ‘‘চার জন হোক বা ৪০ হাজার লোক, সভা আমাদের হবেই।’’
শুভেন্দুর সভামঞ্চে কবিতা পড়লেন রুদ্রনীল ঘোষ। কবিতার নাম দিলেন, ‘ভয় পেয়েছে তৃণমূল’। কবিতার কয়েক লাইন আওড়ালেন তিনি।
শুভেন্দু অভিযোগ করেন ভয় দেখিয়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সভায় আসতে দিচ্ছে না তৃণমূলীরা। তবে তিনি ৫০০ মানুষ জড়ো হলেও সভা করবেনই। বলেন, ‘‘যাঁরা প্রাণ বাঁচিয়ে এসেছেন, তাঁদের জন্য আসতেই হবে সভায়।’’
হটুগঞ্জে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশের সামনেই মারামারি শুরু হয় তৃণমূল এবং বিজেপি কর্মীদের। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। তাঁর সঙ্গেও পুলিশের বচসা শুরু হয়। অশান্তি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় পুলিশ প্রশাসন।
শুভেন্দুর সভার আগে অশান্তি এবং ভাঙচুর। নিজস্ব চিত্র।
তাঁর সভায় যেমন বাধা দেওয়া হচ্ছে। তিনিও চাইলে ৩ সেকেন্ডে মারিশদা থেকে কোলাঘাটে কাঠের গুঁড়ি ফেলে অভিষেকের গাড়ি আটকে দিতে পারেন। কিন্তু তাঁরা তা করবেন না। শুভেন্দুর কথায়, ‘‘এ সব আমাদের সংস্কৃতি নয়।’’
তাঁর সভায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বললেন, ‘‘কাহারও সমান নাহি যায়।’’ শুভেন্দুর অভিযোগ, তাঁর সভার সব রাস্তাই বন্ধ করা হয়েছে। শুধু তাঁর যাওয়ার রাস্তাটাই খোলা আছে। বিরোধী নেতার আরও দাবি, ভোটপরবর্তী হিংসায় অভিযুক্তরাই তাঁর সভায় বাধা দিচ্ছেন। বলেন, ‘‘যেখানে তৃণমূল একটু দুর্বল, সেখানে পুলিশ দিয়ে আমাদের কর্মীদের আটকানো হচ্ছে। অন্যত্র ওই কাজ করছে দুষ্কৃতীরা।’’ তাঁর সংযুক্তি, ‘‘ভয় না পেলে এ সব করবে কেন। আধ ঘণ্টার তো সভা করব। মেদিনীপুরে শান্তিতে সভা হবে। মনে রাখতে হবে, চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়।’’
শুভেন্দু অধিকারীর সভার পথে অশান্তি। তৃণমূল বিজেপির সংঘর্ষে উত্তপ্ত হল হটুগঞ্জ এলাকা। স্থানীয় সূত্রে খবর, ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কে তৃণমূল পথ অবরোধ করেছিল। সকাল থেকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন তৃণমূল কর্মীরা। এর মধ্যেই শুরু হয় ঝামেলা। তৃণমূল ও বিজেপির খণ্ডযুদ্ধে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। দু’পক্ষ একে অপরের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু করে। শাসকদলের কার্যালয় ভাঙার অভিযোগ উঠেছে বিজেপির বিরুদ্ধে। অন্য দিকে, রাস্তায় দাঁড়ানো মোটরবাইকে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় ছুটে এসেছে বিশাল পুলিশবাহিনী।
আগেও ডায়মন্ড হারবারে সভায় বাধার অভিযোগ করেছেন। বেহালার বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ও একই অভিযোগ করলেন শুভেন্দু। তাঁর দাবি, ভোট পরবর্তী হিংসায় অভিযুক্ত তাঁরাই সভা ভণ্ডুলের কাজ করছে। তবে তিনি সভায় যাবেনই। তাঁর কথায়, ‘‘মাঠে ৫০০ হোক, ২ হাজার হোক, যে ক’টা লোক নিজেদের প্রাণ বাঁচিয়ে সভায় আসতে পেরেছেন, তাঁদের জন্য আমি সভাস্থলে যাব। তার পর যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেব।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘তৃণমূল যেন মনে রাখে আরও একটা সভা পূর্ব মেদিনীপুরে চলছে।’’
শুভেন্দু অধিকারীর সভায় পৌঁছে গেলেন বিজেপি বিধায়ক এবং দলের মহিলা মোর্চার নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল।
শনিবার সকালেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মঞ্চ এবং প্যান্ডেল তৈরি শুরু হয়েছে। শনিবার দুপুর দেড়টা নাগাদ সভা চালু করে দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, বিভিন্ন জায়গা থেকে কর্মী ও সমর্থকদের সভায় আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
বিজেপির ডায়মন্ড হারবার সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি সুফল ঘাঁটু বলেন, ‘‘শুভেন্দু বাবু সভা করছেন, ভয় পেয়ে গিয়েছে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল নেতারা। তাই সভা বাঞ্চালের চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বিজেপি কর্মীদের আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যতই বাধা দেওয়া হোক, সভা হবেই। সভামঞ্চ থেকেই তৃণমূলকে জবাব দিয়ে দেবেন শুভেন্দু অধিকারী।’’
তবে বিজেপি কর্মীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক পান্নালাল হালদার বলেন, ‘‘মিথ্যে রটনা করছে বিজেপি। বিধানসভায় ওদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে৷ মানুষ ওদের পাশে নেই। সভায় তেমন লোক জোগাড় করতে পারবে না। তাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করে প্রচারে আসার চেষ্টা করছে।’’
শুভেন্দুর সভার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। —নিজস্ব চিত্র।
শুভেন্দু যখন ডায়মন্ড হারবারে সভা করছেন তখন তাঁর বাড়ির অনতিদূরে সভা করছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই দিনে এবং প্রায় একই সময়ে দুই যুযুধান নেতার সভার ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে উত্তেজনা চরমে।
যদিও শুভেন্দুর সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ কটাক্ষের ভঙ্গিতে টুইটে জানান, শুভেন্দুর মঞ্চ তৈরি করতে চাইছেন না দায়িত্বপ্রাপ্তরাই। তাতে তৃণমূলের কিছু করণীয় নেই বলে জানান তিনি।
ডায়মন্ড হারবারে সভা করতে না দেওয়ার অভিযোগে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। কিন্তু আদালতের নির্দেশের পরও তাঁর সভা বানচালের চেষ্টার অভিযোগে তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে তাঁর হুঁশিয়ারি ছিল, সভা করবেনই। টুইটারে ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু। লিখেছিলেন, ‘‘পারলে ঠেকাও।’’