প্রতীকী ছবি।
সভাপতি বদলের পরে শনিবার সন্ধ্যায় বনগাঁ শহরে জেলা বিজেপি কার্যালয়ে একদল লোক এসে চড়াও হয়। ইটপাটকেল ছুড়ে মারে সাইনবোর্ডে। দলের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় নেতৃত্বকে। ইতিমধ্যে বিজেপির নানা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন নেতা-জনপ্রতিনিধিরা।
বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনস্পতি দেবকে পদ থেকে সরানোর জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছিল দলেরই একটা অংশ। বিধানসভা ভোটে তাঁর নেতৃত্বে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ৬টিতে জয়ী হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থীরা। কিন্তু ভোটের পর থেকে শুরু হয় বনগাঁ বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে কোন্দল। দলের ব্যানারে আয়োজিত অনুষ্ঠান, রক্তদান শিবির-সহ নানা কর্মসূচিতে মনস্পতিকে আমন্ত্রণ করা হচ্ছিল না।
গাইঘাটার ঠাকুরনগরে বাড়ির পাশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ব্রাত্য ছিলেন মনস্পতি। বনগাঁ শহরে রামনগর রোড মোড় এলাকায় বিজেপি কর্মীদের একাংশের উদ্যোগে এক অনুষ্ঠানে মনস্পতির গরহাজিরা অনেকের চোখে লেগেছিল। শহরের মতিগঞ্জ এলাকায় শান্তনুকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানেও মনস্পতি আমন্ত্রণ পাননি বলে অভিযোগ তোলেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা।
দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মূলত শান্তনুর সঙ্গে মনস্পতির বিরোধের জেরেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। দু’জনের অনুগামী নেতা-কর্মীরা আড়াআড়ি ভাবে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় পরস্পরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি চলছিল।
পরবর্তী জেলা সভাপতি হিসেবে সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল-সহ কয়েকজনের নাম দলের অন্দরে ঘোরাঘুরি করছিল। সব জল্পনা বন্ধ করে মনস্পতির জায়গায় দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার নতুন সভাপতি করা হয়েছে রামপদ দাসকে। তিনি মনস্পতির কমিটিতে সহ সভাপতি ছিলেন। আগে অবিভক্ত বারাসত সাংগঠনিক জেলায় তিনি দলের হয়ে সাধারণ সম্পাদক ও সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
গোপালনগর থানা এলাকার বাসিন্দা রামপদ দীর্ঘদিনের বিজেপি কর্মী। তবে তাঁর সভাপতি হওয়াটা বনগাঁ বিজেপি নেতৃত্বের সকলকে খুশি করতে পারেনি বলে সূত্রের খবর। নতুন সভাপতি ঘোষণার পরে অনেকেই দলের বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করেছেন। তাঁদের মধ্যে জনপ্রতিনিধি ও কিছু নেতাও রয়েছেন।
মনস্পতির ঘনিষ্ঠরা জানাচ্ছেন, তাঁরা ভেবেছিলেন মনস্পতিকে সরিয়ে দেওয়া হলে অনেকেই আনন্দ-উৎসব পালন করবেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই অখুশি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, দলের মধ্যে কোনও পক্ষে না থাকা রামপদ সভাপতি হওয়াটা দলের অনেকের কাছেই অপ্রত্যাশিত ঘটনা। সব মিলিয়ে বনগাঁ বিজেপিতে ডামাডোল সৃষ্টি হয়েছে। কর্মীদের অনেক মনে করছেন, পুরভোটে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। রামপদ বলেন, ‘‘আগামী দিনে বুথস্তর পর্যন্ত সংগঠন মজবুত করে প্রতিটি ভোটে জয়লাভ করাই হবে আমার প্রধান কাজ। সকলকে নিয়ে কাজ করব।’’
কী বলছেন মনস্পতি। তাঁর কথায়, ‘‘দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’’
বিধানসভা ভোটের আগে বনগাঁ বিজেপির আলাদা সাংগঠনিক জেলা হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম সভাপতি হন মনস্পতি। ওই সময়ে শান্তনুর সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। শান্তনু এদিন বলেন, ‘‘গোটা বিষয়টি বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়ে যা বলার বলব।’’ এ দিকে, বিজেপির একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন গাইঘাটার বিধায়ক সুব্রত ঠাকুর। তিনি অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের মহা সঙ্ঘাধিপতি। সুব্রত ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘‘ভোট এলেই মতুয়াদের কথা মনে পড়ে। মতুয়ারাই জেতায়। মতুয়াদের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্ব থাকা সত্বেও দলীয় সংগঠনে তাঁরা কোনও জায়গা পান না।’’ সুব্রত ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, যাঁরা ভোটে দলের প্রার্থীদের হারানোর চেষ্টা করেছিলেন, তাঁরাই দলে জায়গা পান। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া। তিনি বলেন, ‘‘দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা মানতে হবে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সভাপতি বদলের সম্পর্ক নেই। কেন বেরোলাম, তা পরে জানাব।’’ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকারও। তিনি বলেন, ‘‘আমি এখনই কিছু বলব না। সময় মতো জানতে পারবেন।’’