সম্মুখ-সমরে: ভাই আইহান ও দাদা মহম্মদ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
পঞ্চায়েত ভোট মানেই দাদা-ভাইয়ের যুগলবন্দি। গত কয়েকটি পঞ্চায়েত ভোটে এ দৃশ্য ছিল বনগাঁর বারাকপুর এলাকার খুব চেনা ছবি। ভাইয়ের শলা পরামর্শ ছিল দাদার মূল ভরসা। আবার পঞ্চায়েত ভোট হাজির দুয়ারে। কিন্তু দাদা-ভাইয়ের বাক্যালাপ নেই।
কেন?
সিপিএম প্রার্থী দাদার বিরুদ্ধে তাঁর ছোট ভাই এ বার তৃণমূলের হয়ে একই আসনে ভোটে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। দাদা বলছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে ভাই প্রার্থী হওয়ায় কষ্ট পেয়েছি।’’ আর ভাই বলছেন, ‘‘দাদা বহুদিনের সদস্য। কিন্তু উন্নয়ন হল কই! তাই প্রার্থী হলাম।’’ একই আসনে বিজেপি প্রার্থী দিলেও আলোচনার কেন্দ্রে কিন্তু সেই দাদা-ভাই।
দাদা মহম্মদ আলি মণ্ডল। বয়স ৭১। সিপিএমের নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত। বনগাঁ ব্লকের গোপালনগর ২ পঞ্চায়েতের ছ’বারের সদস্য তিনি। গতবার এই আসনটি সংরক্ষিত হওয়ায় নিজের বৌমাকে দাঁড় করিয়ে জিতিয়েছিলেন। এ বার সংরক্ষণ নেই। ফের প্রার্থী তিনি।
ভাই আইহান মণ্ডল। বয়স ৪৯। ভাই-বোনেদের মধ্যে সব থেকে ছোট। দীর্ঘ দিন সিপিএম করেছেন। বছর দু’য়েক আগে শাসক দলে নাম লিখিয়েছেন। দল এ বার তাঁকে দাদার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড় করিয়েছে।
আইহান বলেন, ‘‘রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে এলাকায় কোনও উন্নয়নই নেই। বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা পাননি এলাকার বাসিন্দারা। গৃহহীনেরা বাড়িও পাননি। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থেই ভোটে দাঁড়িয়েছি।’’ তাঁর দাবি, প্রার্থী হওয়ার আগে তিনি দাদার কাছে গিয়েছিলেন। আইহান বলেন, ‘‘দাদার হাত ধরে বলেছিলাম, এ বার আর ভোটে না-ই বা দাঁড়ালে। দাদা শোনেননি।’’ দাদার আবার যুক্তি, ‘‘ওঁরা (তৃণমূল) প্রার্থী না হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। আমি দীর্ঘ দিন ধরে সিপিএম করছি। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কথা ভেবেই ভোটে দাঁড়ালাম।’’
ভাইয়ের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে দাদা জানান, পাঁচটি কাঁচা রাস্তা ইট-ঝামার করেছেন। ২৮ জনকে বৃদ্ধের ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। ২৬ জন গৃহহীনের বাড়ি তৈরি হয়েছে তাঁর সময়ে। প্রচারে অবশ্য কেউ কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করছেন না। প্রচারে ভাই বলছেন, ‘‘দাদা উন্নয়ন করতে পারেননি। তাই আমাকে ভোট দিন।’’ আর দাদা বললেন, ‘‘আপনাদের যাকে পছন্দ হবে, তাঁকেই ভোট দেবেন।’’
ভোটে দাঁড়ানো ইস্তক দু’জনের অবশ্য কথা বন্ধ। মহম্মদের কথায় অভিমান ঝরে পড়ে। বললেন, ‘‘আইহানকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। সে-ই আমার বিরুদ্ধে প্রার্থী হল! খুব কষ্ট পেয়েছি।’’ ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক ভোট ফুরোলেই ফের জোড়া লাগবে বলে বিশ্বাস দু’জনেরই।
ইতিহাস বলছে, ওই আসনে সিপিএম ছাড়া গত সাতটি ভোটে আর কোনও দল জিততে পারেনি। তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, ‘‘ইতিহাসেরও তো বদল হয়। বাকিটা জনতা বলবে।’’