প্রতীকী চিত্র।
জমি জটে আটকে গিয়েছে রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, বাসন্তী হাইওয়ে সম্প্রসারণের কাজ। সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান প্রবেশপথ তথা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য সড়ক বাসন্তী হাইওয়ে।
বাসন্তী থেকে কলকাতা পর্যন্ত প্রায় ৭৭ কিলোমিটার লম্বা এই রাজ্য সড়ক মূলত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা হয়ে কলকাতার সঙ্গে মিশেছে। কলকাতা থেকে খুব সহজেই এই পথে বাসন্তীর গদখালি ও ঝড়খালি হয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করা যায়। মাছ,মধু-সহ বনজ উপকরণের ব্যবসায়িক যাতায়াতে এই পথ ব্যবহার হয়। বানতলা চর্মনগরী যাওয়ারও পথ এটি। বহু মানুষ কাজ করেন সেখানে। গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্য সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে জমিজটের কারণে সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না। দু'পাশে সরকারি জমি জবরদখল করে গড়ে উঠেছে দোকান-বাজার। সব মিলিয়ে থমকে রয়েছে বাসন্তী হাইওয়ে সম্প্রসারণের কাজ।
ইতিমধ্যে উত্তর ২৪ পরগনার জেলার অন্তর্গত সরবেড়িয়া থেকে ঘোষপুর পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ ২০১৮ সালের মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। ঘোষপুর থেকে বানতলা চর্মনগরী পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার রাস্তা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্গত। বানতলা চর্মনগরী থেকে সায়েন্স সিটি পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তা পূর্ব কলকাতা জলাভূমির মধ্যে পড়ে। বানতলা চর্মনগরী থেকে ঘোষপুর পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে জটিলতা। এই রাস্তার উপরেই রয়েছে ঘটকপুকুর, বড়ালিঘাট, বিবিরাইট, পাগলাহাট, ভোজেরহাট বাজার। রাস্তার দু’পাশে দোকান-বাজার থাকার ফলে রাস্তাটি সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছে। ওই সমস্ত বাজারে হাজারখানেক দোকান রয়েছে। তা ছাড়া, জমিজট একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা। অন্য দিকে, বানতলা চর্মনগরী থেকে কলকাতার সায়েন্স সিটি পর্যন্ত রাস্তাটি পূর্ব কলকাতা জলাভূমি দফতরের অধীনে থাকায় অনুমতি পেতে সমস্যা হচ্ছে। এই রাস্তার উপরে রয়েছে বামনঘাটা, বানতলা বাজার। এক দিকে জমি সমস্যা, অন্য দিকে জবরদখল— সব মিলিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে বাসন্তী হাইওয়ে সম্প্রসারণের কাজ থমকে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে ব্লক ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দফতর, বাজার কমিটি ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। বাসন্তী রাজ্য সড়ক সম্প্রসারণের কাজটি করছে হাইওয়ে ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন। হাইওয়ে ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন ও জেলা ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাঙড় ১ ব্লক এলাকায় প্রায় ৪.১ একর জমির সমস্যা রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্লক এলাকায় প্রায় ১.৩ একর জমি কেনা হয়ে গিয়েছে। ভাঙড় ২ ব্লক এলাকায় ৫১ ডেসিমেল জমি কিনতে হবে। সরকারি ভাবে কেনা হয়ে গেলে এবং রাস্তার দু'পাশ জবরদখল মুক্ত করা সম্ভব হলে দ্রুত ওই রাস্তার কাজ শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানান হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও জানান হয়েছে। বাসন্তী হাইওয়ে ডিভিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, যত দিন যাচ্ছে বাসন্তী রাজ্য সড়কের উপরে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। কলকাতা থেকে ঘোষপুর পর্যন্ত রাস্তাটি সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। তা ছাড়া, বিভিন্ন জায়গায় ইউটার্ন এর মতো বাঁক রয়েছে। তার উপরে বিভিন্ন এলাকায় বাসন্তী রাজ্য সড়কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লিঙ্ক রোড। রাস্তায় বাঁক থাকার কারণে দূরের গাড়ি অনেক সময়ে নজরে না পড়ায় ঘটছে দুর্ঘটনা। হাইওয়ে দফতর রাস্তাটি যতটা সম্ভব বাঁকমুক্ত করার পাশাপাশি বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা নিয়েছে। জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘বাসন্তী রাজ্য সড়ক সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে জমি-সহ কিছু সমস্যা রয়েছে। জেলার ভূমি সংস্কার দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অবিলম্বে জমির সমস্যা সমাধানের জন্য। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্তরে বৈঠক করেছি। আশা করছি দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’