আগুনে বই পুড়ে যায় অরুণের

পরীক্ষার তিন মাস আগে হঠাৎ বাড়িতে আগুন লেগে সব পুড়ে যায়। বাদ যায়নি উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া বরুণ মণ্ডল বইখাতাও। অভাবের সংসার। মা লক্ষ্মী মণ্ডল পরিচারিকার কাজ করে দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতেই হিমসিম খান। তার মধ্যে নতুন করে বই কিনে দেওয়া অসম্ভব ছিল তাঁর কাছে। তবু পড়াশোনা বন্ধ করেনি বরুণ। সমস্যা সঙ্গে নিয়েই পড়াশোনা করে উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৯০ নম্বর পেয়েছে তালদি মোহনচাঁদ হাইস্কুলের ছাত্রটি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০১৫ ০২:০৮
Share:

পূজা বর্মণ ও বরুণ মণ্ডল।

পরীক্ষার তিন মাস আগে হঠাৎ বাড়িতে আগুন লেগে সব পুড়ে যায়। বাদ যায়নি উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া বরুণ মণ্ডল বইখাতাও। অভাবের সংসার। মা লক্ষ্মী মণ্ডল পরিচারিকার কাজ করে দুই ছেলেকে নিয়ে সংসার চালাতেই হিমসিম খান। তার মধ্যে নতুন করে বই কিনে দেওয়া অসম্ভব ছিল তাঁর কাছে। তবু পড়াশোনা বন্ধ করেনি বরুণ। সমস্যা সঙ্গে নিয়েই পড়াশোনা করে উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৯০ নম্বর পেয়েছে তালদি মোহনচাঁদ হাইস্কুলের ছাত্রটি।
বরুণ জানায়, ছেলেবেলাতেই তার বাবা মারা যান। ছোট ভাই দিনমজুরের কাজ করে। সংসারের কাজ সামলে পড়াশোনা করতে হয় বরুণকে। তার কথায়, ‘‘বই, খাতা, নোটগুলি না পুড়লে আরও ভাল ফল করতে পারতাম। বন্ধুদের থেকে চেয়েচিন্তে পড়তে হয়েছে।’’ তালদির বয়ারসিং গ্রামে এক চিলতে মাটির বাড়ি বরুণদের। বাড়ি থেকে আধ ঘণ্টা পায়ে হেঁটে স্কুলে যেত ছেলেটি। গৃহশিক্ষক ছিল না। স্কুলের শিক্ষকেরাই ছিলেন একমাত্র ভরসা। বরুণের স্বপ্ন, ইংরেজি অনার্স নিয়ে কলকাতার কোনও ভাল কলেজে ভর্তি হতে। কিন্তু কী ভাবে ছেলের স্বপ্নপূরণ হবে, সেই প্রশ্নে মুখে উত্তর সরে না লক্ষ্মীদেবীর। বলেন, ‘‘লোকের বাড়িতে কাজ করে ছেলের পড়া চালানো যে আমার পক্ষে অসম্ভব!’’

Advertisement

আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যেও রাঙাবেলিয়া হাইস্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ৪২৩ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে পূজা বর্মন। বাবা প্রশান্তবাবু এবং মা পূর্ণিমাদেবী দু’জনেই দিনমজুর। গোসাবার মন্মথনগরের বাড়ি থেকে নদীপথে স্কুলের দূরত্ব অনেকটাই। সে কারণে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছে মেয়েটি। বাবা-মা জানান, ছোট থেকেই স্কুলে প্রথম হয়েছে মেয়ে। টাকার অভাবে বরুণের মতো তারও গৃহশিক্ষক ছিল না। স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক বিনয় জানা তাকে পড়িয়েছেন। বিনিময়ে একটি টাকাও নেননি। ভবিষ্যতে আইপিএস পরীক্ষায় বসতে চায় পূজা। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য নেই বর্মণ দম্পতির। কী ভাবে মেয়ের পরবর্তী পড়াশোনার খরচ জোগাড় হবে, তাঁরা তা ভেবেই আকূল। প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘আমাদের রোজগার যৎসামান্য। এই আয়ে মেয়ের উঁচু ক্লাসে পড়ার খরচ বহন করব কী ভাবে, বুঝতে পারছি না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement