দুর্ঘটনা ঘটছে আকছার। চুরি-ছিনতাই তো রোজের ঘটনা। খুন করে ফেলে দিয়ে যাওয়াও বাদ নেই। এমনকী পুলিশের একাংশের তোলাবাজি এবং তা এড়াতে গিয়ে জোরে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা বা চাপা দিয়ে পথচারীকে মেরে ফেলার সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়।
পথের এই সমস্ত রকম বিপত্তি হাজির বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও কল্যাণী বাইপাস এলাকায়। পরিসংখ্যানই বলছে, সবচেয়ে বেশি অপরাধ সংগঠিত হয় ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকার এই দুই রাস্তায়। এ সব এড়াতেই এ বার ওই দুই রাস্তাকে পাখির চোখ করেছে পুলিশ। সমস্ত রকম অপরাধ দমনে তাই দুই পথকেই বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে ব্যারাকপুর কমিশনারেট পুলিশ।
ব্যারাকপুরের কমিশনার হিসেবে কাজে যোগ দিয়েই অন্যান্য পুলিশকর্তা, কমিশনারেট এলাকার সমস্ত থানার পুলিশ আধিকারিক, ট্রাফিক পুলিশকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন তন্ময় রায়চৌধুরী। সেখানেই তিনি জানিয়ে দেন, যেহেতু বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও কল্যাণী বাইপাসে সবচেয়ে বেশি অপরাধ, দুর্ঘটনা বা সমস্যা লেগে থাকে, তাই ওই রাস্তা দু’টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে ঢেলে সাজানো হবে। পরে তিনি বলেন, ‘‘এক মাসের মধ্যেই এই কাজ শেষ করা হবে।’’
কমিশনার জানিয়েছেন, ওই দু’টি পথে এতদিন মোবাইল পুলিশ টহলদারি গাড়িতে পাহারা দিত। কিন্তু সেই পাহারার নির্দিষ্ট কোনও জায়গা না থাকায় এবং অনেক সময়ে যাত্রীদের কাছে সংশ্লিষ্ট থানার ফোন নম্বর না থাকায় কিছু ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে অনেকে পুলিশকে জানাতে পারেন না। তাই ওই দুই রাস্তাতেই তৈরি হবে স্থায়ী পুলিশ চৌকি। দিনে পুলিশ কর্মী এবং রাতে সেখানে থাকবেন অফিসার। থাকবে ওয়াকিটকিও। ফলে সেখান থেকে সংশ্লিষ্ট সমস্ত থানা এবং পুলিশ হেড কোয়ার্টারে যোগাযোগ করা যাবে। বিশেষ কয়েকটি জায়গায় বসানো হবে সিসি ক্যামেরাও।
তন্ময়বাবু আরও জানান, দক্ষিণেশ্বর থেকে এয়ারপোর্ট আড়াই নম্বর গেট পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উপরেই তৈরি হবে চারটি স্থায়ী পুলিশ চৌকি। সেগুলি হবে বরাহনগর, বেলঘরিয়া, নিমতা এবং দমদমে। কারণ, ওই পথ ধরে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল ছাড়াও নিবেদিতা সেতু হয়ে দিল্লি বা বম্বে রোড ধরার জন্য বহু মানুষ এই পথ ধরেন। নিউ টাউন বা রাজারহাট থেকে বালি বা উত্তরপাড়া যাওয়ার পথও এটি।
অন্য দিকে, নিমতা থেকে কল্যাণী পর্যন্ত কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের ৩৫ কিলোমিটার কমিশনারেট এলাকায় গড়া হবে ৭টি পুলিশ চৌকি। সেগুলি তৈরি হবে নিমতা, খড়দহ, টিটাগড় (২টি), নৈহাটি, জগদ্দল এবং বীজপুর এলাকায়। কল্যাণী বাইপাসের প্রায় ৫ কিলোমিটার অন্তর পুলিশের দেখা মিলবে বলে কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে।
বদলে যাবে পুরোনো ব্যবস্থাও। টহলদারি পুলিশ গাড়ির চেয়ে বেশি সংখ্যক মোটরসাইকেল ব্যাবহার করা হবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। কমিশনারের কথায়, ‘‘এমনিতেই পুলিশ-গাড়ির সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। তার উপরে বেশি পুলিশকর্মী, চালকের দরকার পড়ে, খরচও বেশি। এ ছাড়া ওই দুই রাস্তায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয়। আর মোটরসাইকেলে চড়ে অনেক দ্রুত চলাফেরা করা যায়।’’
আর দুর্ঘটনা যেহেতু এখানে প্রতিদিনের ঘটনা, তাই দুই পথেই দু’টি করে অ্যাম্বুল্যান্স রাখা থাকবে। কারণ পুলিশের অভিজ্ঞতা হল, কেউ আহত হলে বেশিরভাগ গাড়িই তা দেখেও ঝুট-ঝামেলার ভয়ে এড়িয়ে যায়। পুলিশ ছাড়া কেউ আহতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান না। তন্ময়বাবু বলেন, ‘‘অতীতে এমন ঘটনাও ঘটেছে যে আহতকে কিছু আগে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারলেই হয়তো পা কাটা পড়ত না বা মানুষটা বেঁচে যেত।’’ তাই ওই অ্যাম্বুল্যান্স রাখার সিদ্ধান্ত।
দুই রাস্তার যে অংশ যে থানা এলাকায় পড়বে, তার শুরু ও শেষে ওই থানার নাম, ফোন নম্বর ও কন্ট্রোল রুমের নম্বর বড় করে টাঙানো থাকবে। পথের দু’পাশেও ফ্লেক্সে লেখা থাকবে জরুরি পরিষেবা নম্বরগুলি। কমিশনারেট সূত্রে খবর, এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে বৈঠক হবে। কমিশনারেট এলাকার মধ্যে রয়েছে কলকাতার অনেকটা অংশও। ফলে সেখানে ১০০ ডায়ালে ফোন করলে কখনও কখনও তা চলে যায় কলকাতা পুলিশ এলাকার থানাতেও। সেই ব্যবস্থার উন্নতির জন্যও বিএসএনএল-এর সঙ্গেও বৈঠকে বসছে ব্যারাকপুর কমিশনারেট পুলিশ।