বাধা ছিল তিনটি। সেই তিন বাধাই অতিক্রম করে শুরু হচ্ছে বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত যশোহর রোড সম্প্রসারণের কাজ। এর মধ্যে মূল বাধা এসেছিল রাস্তার দু’পাশের দোকানদার এবং হকারদের থেকে। উচ্ছেদ হওয়া সেই দোকানি ও হকারদের এ বার পুনর্বাসন দেওয়ার ব্যবস্থা করছে রাজ্য সরকার।
ওই এলাকায় মোট ন’টি হকার্স কর্নার তৈরি করে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া দোকানদার ও হকারদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ করার জন্য উচ্ছেদ হওয়া দোকানিদের পুনর্বাসনের টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়ার কথা। কিন্তু তারা রাজি হয়নি। রাস্তা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তার কথা ভেবে পুনর্বাসনের জন্য রাজ্য সরকার নিজেই জমি দেখে, টাকা দিয়ে বাজার তৈরি করে দেবে।’’ রাজ্য সরকারের ঘোষিত নীতিই ছিল, বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। সে জন্য বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত যশোহর রোড (৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক) সম্প্রসারণের কাজে বাধা আসে। কিন্তু ওই রাস্তা সম্প্রসারণ যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তা জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার সম্প্রসারণের এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত মোট ১১৮৪টি দোকানের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য প্রথম ধাপে বারাসত, অশোকনগর ও বনগাঁয় একটি করে এবং হাবরায় দু’টি জায়গায় রেল লাইনের উপর সেতু করা হবে। এ দিন উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘এলাকা পরিদর্শনের পরে ওই সেতুগুলির জন্য টেন্ডার ডাকা হয়ে গিয়েছে। কাজ অনেকটা এগিয়েও গিয়েছে।’’ চওড়া হবে পুরো রাস্তাটিও। সেই কাজ করতে গিয়ে মূলত তিনটি বাধা আসে। এক, রাস্তার দু’পাশের দোকানি ও হকার উচ্ছেদ। দুই, রাস্তার নীচে টেলিফোনের তার তোলা নিয়ে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা বিএসএনএল এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বিরোধ। তিন, রাস্তার কাজের জন্য প্রায় সাড়ে তিনশো গাছ কাটা নিয়ে বন বিভাগের মধ্যে ঝামেলা। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের দুই সংস্থা ও রাজ্যের বিভিন্ন দফতরের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং রাস্তা সংলগ্ন দোকানি ও হকারদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন খাদ্যমন্ত্রী ও জেলাশাসক। এর পর টেলিফোনের তার তোলা ও গাছ কাটার সমস্যা দু’টিও মিটে গিয়েছে বলে এ দিন জানিয়েছেন জেলাশাসক।
জ্যোতিপ্রিয়বাবু এ দিন জানান, হকার, দোকানিদের বেশি সমস্যা রয়েছে হাবরায়। তাই হাবরায় ৪টি, বারাসতে ১টি, অশোকনগরে ১টি ও বনগাঁয় ২টি বাজার তৈরি করে তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘পথ সম্প্রসারণ যেমন জরুরি, তেমন উচ্ছেদ হওয়া মানুষের রোজগার যাতে বন্ধ হয়ে না যায় সেটাও দেখা প্রয়োজন। কিন্তু তা নিয়ে তো কেন্দ্রের হেলদোল নেই। পুর্নবাসনের কাজটা তাই আমাদেরই করতে হচ্ছে।’’