Footpath Tax

ফুটপাতের বাজার থেকে কর নিচ্ছে বারাসত পুরসভা!

সঙ্কীর্ণ রাস্তার ফুটপাত দখল করে বসা বাজার থেকে নিয়মিত কর নিচ্ছে পুরসভা। ওই সব রাস্তায় সাইকেল বা বাইক দাঁড় করিয়ে কেনাকাটা করেন ক্রেতারা।

Advertisement

সত্যজিৎ চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৪ ০৭:০০
Share:

রাস্তার ফুটপাতের বাজারের ব্যবসায়ীদের থেকে রসিদ দিয়ে কর নিচ্ছে বারাসত পুরসভা। নবপল্লির ছোটবাজারে। ছবি: সুদীপ ঘোষ।

সারা শহর জুড়ে যখন ফুটপাত, রাস্তা বা সরকারি জমি থেকে দখলদারি হটাতে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে, তখন বারাসত পুরসভা হাঁটছে উল্টো পথে। দখল হটানো তো দূর, বরং ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের থেকে পরিষেবা কর নিয়ে তাঁদের এক প্রকার মান্যতা দিচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ। ২০২২ সাল থেকে চলছে এই প্রক্রিয়া।

Advertisement

সঙ্কীর্ণ রাস্তার ফুটপাত দখল করে বসা বাজার থেকে নিয়মিত কর নিচ্ছে পুরসভা। ওই সব রাস্তায় সাইকেল বা বাইক দাঁড় করিয়ে কেনাকাটা করেন ক্রেতারা। ফলে পুরসভার বেশ কিছু রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা কার্যত ঝুঁকির হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটছে দুর্ঘটনাও।

এ দিকে, ফুটপাতে পসরা নিয়ে বসলে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। কারণ পুরসভাকে পরিষেবার জন্য নিয়মিত কর দিচ্ছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা। ফলে বারাসত পুরসভার নবপল্লি সার্কুলার রোড, অশ্বিনীপল্লি রোড-সহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের রাস্তার ফুটপাতে দিনে দিনে বাড়ছে বাজারের পরসা। সেখানে আনাজ, ফুল, ফল ও মাছ নিয়ে বসছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

বছরের পর বছর ধরে ফুটপাত দখল করে থাকা আনাজ, মাছ ও ফুল ব্যবসায়ীদের না সরিয়ে উল্টে রসিদ দিয়ে দৈনিক ১০ টাকা করে পরিষেবা কর আদায় করছে পুরসভা। পুরসভা সূত্রের খবর, ২০২২ সালে পুর নির্বাচনের পরে গঠিত নতুন বোর্ড বাজার এলাকা সাফাইয়ের জন্য এই কর আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়। সূত্রের খবর, বারাসত শহরের বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাতে সব মিলিয়ে মোট ১০টি বাজার বসে। পুরসভার দাবি, নিয়মিত সাফাই করা হয় রাস্তাগুলি। পরিষেবা করের ওই টাকা সেই কাজে ব্যবহার হয়।

এই পুরসভার উপর দিয়ে গিয়েছে তিনটি জাতীয় সড়ক। সেগুলি হল, উত্তরবঙ্গগামী কৃষ্ণনগর রোড, পেট্রাপোল সীমান্তগামী যশোর রোড আর হাসনাবাদগামী টাকি রোড। জাতীয় সড়কের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতও দখল করে বসে দোকানবাজার। এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার সরু রাস্তায় বসা ব্যবসায়ীর সংখ্যাও দিনে দিনে বাড়ছে। ফলে স্কুল ও অফিসের ব্যস্ত সময়ে যানজটে ভুগছে এলাকা। অথচ অভিযোগ, সেই যানজট নিয়ন্ত্রণে নেই কোনও পুলিশ বা পুরসভার কর্মী।

সেই সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভের কারণ, পুরপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন বারাসত পুরসভা নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করলেন না? নবপল্লির বাসিন্দা স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে এ সব দেখার কেউ নেই। অথচ সম্প্রতি ছোটবাজার এলাকার কর্মস্থলে যাওয়ার পথে এক ব্যক্তি গাড়ির ধাক্কায় রাস্তায় পড়ে গেলে তাঁর মাথা ফাটে।’’

সরোজ দে নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ফুটপাতে বসার জন্য ব্যবসায়ীদের থেকে পুরসভা টাকা নিচ্ছে। অর্থাৎ, বাজার যত বসবে, পুরসভার আয় তত বাড়বে। করের টাকা তুলতে ব্যবসায়ীরা জিনিসের দামও বাড়ান।’’ আর এক বাসিন্দা অশোক সেন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বারাসত পুরসভার কথা কেন বললেন না, জানি না। বাজারের দাপটে সরু গলি দিয়ে যাতায়াত করা যায় না।’’

বারাসত পুরসভার উপপ্রধান তাপস দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার থেকে ফুটপাতের সমীক্ষা শুরু হয়েছে। বাজার সরানোর সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে পুর বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফুটপাতের ব্যবসায়ীপিছু দৈনিক ১০ টাকা কর নেওয়া হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement