বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হল ৬৮তম বাণীপুর লোক উৎসব। —নিজস্ব চিত্র।
ছৌ, ঝুমুর, রায়বেঁশে, নাটুয়া, পুতুল নাচ, লেটো ও বাউল গানের সম্ভার নিয়ে শনিবার থেকে শুরু হল ঐতিহ্যবাহী হাবড়ার বাণীপুর লোক উৎসব। সদ্যপ্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী অনুপ ঘোষালকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে উৎসবে। জনতা হলের নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে।
এ দিন দুপুরে স্কুল পড়ুয়া, বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য, সহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী, শিক্ষক-সহ কয়েক হাজার মানুষকে নিয়ে শোভাযাত্রার মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হয়। উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট বাউলশিল্পী বাবু ফকির। আদিবাসী নৃত্য, মহিলা ঢাকি, ধামসা-মাদল, বহুরূপীদের নিয়ে শোভাযাত্রায় ছিল সংস্কৃতির ছাপ। হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দু’ধারে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে শোভাযাত্রা উপভোগ করেন। বহুদিন আগেই এই লোক উৎসবের জনপ্রিয়তা জেলার গণ্ডি পেরিয়ে গোটা রাজ্যে পৌঁছে গিয়েছে। উৎসব এ বার ৬৮ বছরে পড়ল। চলবে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। মূল মঞ্চের নামকরণ করা হয়েছে হাবড়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান, প্রয়াত শিবরতন কোঠারির নামে।
উৎসবে ছোটবড় ১৪০০ স্টল থাকছে। বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজের পসরার, দর্শনীয় জিনিসপত্রের এবং খাবারের স্টলও থাকছে। উদ্যোক্তাদের তরফে জানানো হয়েছে, মেলা প্রাঙ্গণের মূল মঞ্চ-সহ মোট ছ’টি মঞ্চে প্রতিদিনই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। কোথাও বসবে লোকসঙ্গীতের আসর, কোথাও বাউল গান, কোথাও থাকছে আলোচনাসভা বা যাত্রা। থাকছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলো। এ ছাড়া, স্বাস্থ্য শিবিরও।
উৎসব কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৫৬ সালের ২৮ মার্চ লোক উৎসব শুরু হয়৷ ১৯৭০ সাল পর্যন্ত রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনায় হয়েছিল। বিশেষ কারণে ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত উৎসব বন্ধ ছিল৷ ১৯৮৬ সাল থেকে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ফের শুরু হয়।
হাবড়ার পুরপ্রধান তথা উৎসব কমিটির সভাপতি নারায়ণচন্দ্র সাহা বলেন, ‘‘বাণীপুর লোক উৎসবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা দায়বদ্ধ। কেবল রাজ্যের নয়, গোটা দেশে এই উৎসব জায়গা করে নিয়েছে। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর উৎসবে সহযোগিতা করছে।’’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নারায়ণ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ।
উৎসবে আসা কিছু লোকশিল্পী জানান, এখানে তাঁরা লোকসংস্কৃতির শিকড়ের টান খুঁজে পান। তাই প্রতি বছর আসেন। হাবড়াবাসী উৎসবকে নিয়ে গর্ব করেন। তাঁদের কাছে এটি বার্ষিক পার্বণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।