উদ্যাপন: দক্ষিণ হাবড়ায় গণেশ পুজো। ছবি: সুজিত দুয়ারি
গত বছরও এই সময়ে করোনার পরিবেশ কাটেনি। বাজার ছিল মন্দা। করোনার সেই দাপট এখন নেই। মানুষ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরেছেন। গণেশ পুজোরও ধুমধাম নানা দিকে। তবে ব্যবসায়ীদের অনেকে জানালেন, পুজোর দিনও বিশেষ ভিড় দেখা গেল না দোকানগুলিতে। বনগাঁর ব্যবসায়ীরা জানালেন, দুর্গাপুজোর আর মাত্র একমাস বাকি। কিন্তু পুজোর বাজার শুরুই হয়নি। স্বাভাবিক সময়ে গণেশ পুজোর সময় থেকেই পুজোর কেনাকাটা শুরু হয়ে যায়।
করোনার প্রকোপ না থাকলেও জিনিসপত্রের বাজার অগ্নিমূল্য। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় অনেক ব্যবসায়ী দোকানে ঘটা করে গণেশ পুজো করেন। কিন্তু এ বার অনেকে নমো নমো করে পুজো সেরেছেন। ব্যবসায়ীরা জানালেন, মানুষের হাতে নগদের অভাব আছে।
জেলার বনগাঁ, বসিরহাট ও বারাসত মহকুমায় পুজোর বাজার শুরু হয়নি। শাড়ি গয়না, বিউটি পার্লারে ভিড় চোখে পড়ছে নেই।
বনগাঁ শহরের প্রতিষ্ঠিত শাড়ি ব্যবসায়ী বাপন সাহা। জানালেন, পুজোর বাজার খুবই খারাপ। গত বছরে এই সময়ের তুলনায় বাজার আরও খারাপ। স্বাভাবিক সময়ে গণেশ পুজোর দিন থেকেই দোকানে ভিড় শুরু হয়। এ বার তা হয়নি। বনগাঁর স্বর্ণ ব্যবসায়ী দিলীপ মজুমদার বলেন, ‘‘দোকানে কেনাকাটা নেই বললেই চলে। কাপড়-শাড়ি-গয়না সহ কোনও দোকানের ক্রেতা নেই।’’
ব্যবসায়ীদের অনেকের মতেই, করোনা ও লকডাউন পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। তাঁরা সেই অভ্যাস থেকে বেরোতে চাইছেন না। তা ছাড়া, নগদের জোগানের অভাব আছে অনেকের হাতেই।
বনগাঁর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অনেকে আবার মনে করছেন, মহকুমার অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভরশীল ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার উপরে। কিন্তু এখন পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রাকে পণ্য রফতানির জন্য অনলাইন স্লটবুকিং ব্যবস্থা চালু হয়েছে। ফলে স্থানীয় ট্রাক মালিক বা ট্রান্সপোর্টাররা কাজ হারিয়েছেন। এক ট্রাক মালিকের কথায়, ‘‘আমার একটি ১০ চাকার ট্রাক আছে। প্রায় ২৫ দিন ধরে ট্রাক বসে। কাজ নেই। এখন পণ্যভর্তি ট্রাক বাইরের রাজ্য থেকে এসে সরাসরি পেট্রাপোল হয়ে বেনাপোল চলে যাচ্ছে। এর ফলে স্থানীয় ট্রাক মালিকেরা কাজ হারাচ্ছেন। এর সঙ্গে রয়েছে ট্রাক চালক ও খালাসিরাও। এ সবের প্রভাব পড়েছে পুজোর বাজারে।’’
এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘করোনা পরিস্থিতির আগে জেলার বনগাঁ ও বসিরহাট সীমান্ত দিয়ে গরু-সহ নানা ধরনের পাচার, চোরাচালান চলত। এখন অনেকাংশেই সে সব বন্ধ। ওই সব কাজে দুই মহকুমার বহু মানুষ যুক্ত ছিলেন। তাঁরা এখনও অনেকেই বিকল্প পেশা খুঁজে পাননি। এ সবের প্রভাবও পড়েছে কেনাকাটায়।’’
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, করোনায় অনেকের কাজ চলে গিয়েছে। বেতন কমেছে। সে সব পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় অন্যতম অর্থকরী ফসল পাট। চাষিরা পুজোর আগে পাট বিক্রি করে পুজোর কেনাকাটা করেন অনেকেই। এ বার পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় চাষিরা ঠিকমতো পাট পচাতে পারছেন না। খেতে পাট পড়ে আছে। এই চাষিদেরও অনেকে কেনাকাটা করতে পারছেন না। তা ছাড়া, জিনিসপত্রের দাম বাড়াও একটি কারণ বলে অনেকের মত।’’
তবে হাবড়ার ইমিটেশন গয়না ব্যবসায়ী বাসুদেব কুণ্ডু জানালেন, দু’বছর কোনও ব্যবসা হয়নি। এখন হাল ফিরছে। ব্যাগ ব্যবসায়ী সঞ্জীব কুণ্ডু আবার জানালেন, দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় বিক্রি হয়নি। এখন ধীরে ধীরে হচ্ছে। বিউটি পার্লারের মালিক এক মহিলার কথায়, ‘‘মহালয়ার পর থেকে ব্যবসা একটু ভাল হবে, সেই আশায় আছি।’’