স্কুলের ছাদের অবস্থা (বাঁ দিকে), ছাতা মাথায় ক্লাসে বসে পড়ুয়ারা (ডান দিকে)। — নিজস্ব চিত্র।
স্কুলে ক্লাস চলছে। পড়ুয়ারা ছাতা মাথায় বসে! গরমে পুড়তে পুড়তে বৃষ্টির জন্য হাপিত্যেস করছে যে দক্ষিণবঙ্গ, সেখানেই দেখা গেল এই চিত্র। বৃষ্টির জল নয়, উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের প্রাথমিক স্কুল ভবনের অবস্থা এতই খারাপ যে, ছাদ থেকে প্রতিনিয়ত খসে পড়ছে চাঙড়। সেই চাঙড় ঘাড়ে পড়ে যাতে ছোট ছোট পড়ুয়ারা আহত না হয়, সে জন্যই হাতিয়ার হয়েছে বর্ষার ছাতা। ঘটনাস্থল হিঙ্গলগঞ্জের দুলদুলি পুকুরিয়া আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রধান শিক্ষকের দাবি, বার বার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কাজের কাজ কিছু হয়নি। অগত্যা, ভরসা ছাতা!
আর পাঁচটা দিনের মতোই দুলদুলি পুকুরিয়া আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলছিল। সেই সময় আচমকাই ছাদ থেকে খসে পড়ে চাঙড়। অল্পের জন্য সেই চাঙড় মাথায় পড়া থেকে রক্ষা পায় পড়ুয়ারা। তার পরেই ছাতা ধরে ক্লাস করতে থাকে তারা। জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক দিন ধরেই স্কুলের ছাদ থেকে চাঙড় খসে পড়ছে নীচে। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতেই চলছে স্কুল। কিন্তু বৃহস্পতিবার যে ঘটনা ঘটল, তাতে বড় অঘটন ঘটে যেতে পারত বলেই আশঙ্কিত অভিভাবকেরা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রুদ্রপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, ‘‘ক্লাসঘরে ছাদ থেকে চাঙড় ভেঙে ভেঙে নীচে পড়ছে। সেই কারণেই বাচ্চারা ছাতা মাথায় দিয়ে পড়াশোনা করতে বাধ্য হচ্ছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি গত কয়েক বছর ধরে কয়েক বার জানিয়েছি। রিপোর্টও দিয়েছি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সে রকম কোনও ব্যবস্থাই হয়নি।’’
প্রধান শিক্ষক তাঁর অসহায়তার কথা জানালেন ঠিকই কিন্তু কর্তৃপক্ষের গড়িমসির জেরে যদি বাচ্চাদের ক্ষতি হয়, সেই ভয় সবচেয়ে বেশি অভিভাবকদের। যাঁরা প্রতি দিন তাঁদের বাড়ির ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠান পড়াশোনা শেখাতে। এই ঘটনায় তাঁরা ক্ষুব্ধ। গঙ্গা সরদারের সন্তান এই স্কুলের পড়ুয়া। তিনি বলছেন, ‘‘স্কুলের ছাদ ভেঙে ভেঙে পড়ছে সেটা খুব ভয়ের বিষয়। বাচ্চারা ক্লাস করে, যখন তখন বিপদ হতে পারে। সে জন্যই আমরা ঠিক করেছি, স্কুল মেরামত করা না হলে বাচ্চাকে আর স্কুলে পাঠাব না। বাচ্চারা বাধ্য হচ্ছে ছাতা মাথায় দিয়ে পড়তে। এখানে আর স্কুল নেই। অনেক দূরে স্কুল আছে। তাই বাধ্য হয়ে এখানেই পড়াতে হচ্ছে।’’
স্কুলের পড়ুয়া রিম্পা সরদার ছাতা মাথায় দিয়ে ক্লাসে বসেছিল। তাকে কারণ জিজ্ঞেস করায় সে বলে, ‘‘ছাদ ভেঙে পড়বে, তাই ছাতা মাথায় দিয়ে পড়ছি। যদি না সারাই হয় তাহলে আর স্কুলে আসব না।’’