প্রতীকী ছবি।
দৈনিক কুড়ি টাকা করে দিতেই হত। অসুস্থতার কারণে যদি গাড়ি নাও চালান, তাও ওই টাকা দেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। বনগাঁ শহরের টোটো ই-রিকশা চালকদের এমনটাই দাবি। তবে সেই টাকার কোনও হিসাবও তাঁদের কখনও দেওয়া হত না বলে অভিযোগ।
চালকরা জানান, খাতায় কলমে ‘পার্কিং ফি’ বাবদ ওই টাকা নেওয়ার কথা তাঁদের জানানো হলেও বাস্তবে তাঁদের কোনও পার্কিং ব্যবস্থাই নেই।
চালকদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সাল থেকে শহরে প্রথমে টোটো ও পরে ই-রিকশা চলছে। এখন ই-রিকশার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫০০। চালক প্রতি দৈনিক কুড়ি টাকা করে হিসাব করলে টাকার পরিমাণ হয় প্রায় এক কোটি টাকার কাছাকাছি।
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন— অনুমোদিত বনগাঁ মতিগঞ্জ নিমতলা ই-রিকশা ইউনিয়নের অধীনে ই-রিকশা চালকেরা গাড়ি চালান। চালকদের অভিযোগ, জোর করে ভয় দেখিয়ে ওই টাকা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। প্রতিবাদ করলে গাড়ি বসিয়ে দেওয়া হত। যদিও লোকসভা ভোটে বনগাঁ শহরে তৃণমূলের ভরাডুবির পর থেকে চালকেরা দৈনিক কুড়ি টাকা করে দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
অভিযোগ-নামা
• রাস্তায় গাড়ি বের না হলেও রোজ কুড়ি টাকা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
• নিজের গাড়ি বিক্রির অধিকার নেই চালকদের।
• ইউনিয়ন মারফত গাড়ি বিক্রি করতে হবে। ইউনিয়ন থেকে যা টাকা দেওয়া হবে, তাই নিতে হবে চালকদের।
• পুরনো গাড়ি কিনতে চাইলে ইউনিয়ন কর্তাদের কাটমানি দিতে হবে।
ই-রিকশা চলকদের কথায়, ‘‘এক চালকের মা মারা গিয়েছিলেন। শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করে ১৩ দিন পর তিনি কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকেও ১৩ দিনের টাকা নেওয়া হয়েছিল। কেউ বিয়ে করতে গেলেও কুড়ি টাকা দিতে হয়েছে।’’
এক চালক বলেন, ‘‘অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। আমার কাছ থেকেও কুড়ি টাকা করে নেওয়া হয়েছে।’’ শুধু তাই নয়, চালকেরা নিজেদের গাড়ি নিজের ইচ্ছামতো বিক্রিও করতে পারতেন না। অভিযোগ, ইউনিয়নের কাছে বিক্রি করতে হত। ইউনিয়ন যা দাম দিত তাই নিতে হত। যদিও ইউনিয়নের পক্ষ থেকে গাড়ি আরও বেশি দামে বিক্রি করা হত। কেউ পুরনো গাড়ি কিনতে চাইলে ইউনিয়নের কর্তাদের তাঁকে কাটমানি দিতে হত। অভিজিৎ মোদক নামে এক ই-রিকশা চালক বলেন, ‘‘আমি পুরনো গাড়ি ইউনিয়ন থেকে ২ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলাম। ইউনিয়নকে কাটমানি দিতে হয়েছিল ২৫ হাজার টাকা।’’
চালকেরা জানান, দু’বছর আগে টোটোর পরিবর্তে ই-রিকশা দেওয়া হয়। পুরনো টোটো গাড়ি জমা নেওয়া হয়। ইউনিয়ন থেকে বলা হয়েছিল, ই-রিকশা নেওয়ার সময় পুরনো টোটো প্রতি ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। বাস্তবে তা দেওয়া হয়নি। এক চালকের কথায়, ‘‘পুরনো টোটো গাড়ি বিক্রি করতে পারলে আমি কিছু টাকা দিতাম। সে সুযোগও তো দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে গাড়ি বসিয়ে দেওয়া হত। টাকার বিনিময়ে সেই গাড়ি চালানোর অনুমতি মিলত।’’
চালকদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী এখন কাটমানি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তা হলে তাঁদেরও তো টাকা ফেরত পাওয়ার কথা। ইউনিয়ন সূত্রে জানানো হয়েছে, সকলে সিদ্ধান্ত নিয়ে দৈনিক কুড়ি টাকা করে নেওয়া স্থির করা হয়েছিল। কেউ আপত্তি করেননি কেন? ইউনিয়নের তরফে ক্রিকেট টিম তৈরি করা হয়েছিল। মহকুমা ক্রিকেট লিগে দল খেলেছে। বিভিন্ন টুর্নামেন্টে যোগ দিয়েছেন। রক্তদান শিবিরের মতো সামাজিক কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তহবিলের টাকা ওই সব কাজে খরচ হয়েছে। ইউনিয়নের কর্তা প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘এতদিন ওরা কেন কোনও অভিযোগ করলেন না। টোটো ছেড়ে ওরা ই-রিকশা নিয়েছেন সরাসরি একটি সংস্থা থেকে। মোট দামের থেকে সংস্থাটি ১৫ হাজার টাকা কম নিয়েছে বলে সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন।’’