সামান্য এই সাজগোজ পর্যটক টানতে পারছে কি, উঠছে প্রশ্ন। —নিজস্ব চিত্র।
শীতের মরসুম। সুন্দরবন-সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার পর্যটনস্থলগুলিতে ভিড় জমছে। কিন্তু বকখালিতে সেই ভিড় কই!
চলতি বছরের গোড়ার দিকে বকখালির বিশালক্ষ্মী মন্দির লাগোয়া বনাঞ্চলে আগুন লেগেছিল। প্রায় দু’কিলোমিটার বিস্তৃত জায়গা জুড়ে বহু ঝাউ এবং অন্যান্য গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এখনও সেই জায়গা আগের অবস্থায় ফেরেনি।
এমনকী, আকর্ষণ কমেছে বকখালি পিকনিক গ্রাউন্ডের। গাছের অভাবে ন্যাড়া হয়ে গিয়েছে গোটা এলাকা। অথচ, বছরখানেক আগেও ঝাউ গাছে ভরা ছিল সারা মাঠ। এত দিনেও প্রশাসনের তরফে বনসৃজনের উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এখানকার ইকো-ট্যুরিজ়ম ডিয়ার পার্ক।
আগে সারা বছরই সপ্তাহান্তের ছুটিতে বকখালিতে ভিড় জমত। শীতে ভিড় বাড়ত। কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, পর্যটকদের কাছে এই পর্যটনকেন্দ্রের আকর্ষণ কমছে। অনেক পর্যটক মনে করেন, যে কোনও পর্যটনকেন্দ্রে পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু বকখালিতে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন সে ভাবে হচ্ছে না। বকখালির আগের সেই সৌন্দর্যও আর নেই।
কোথায় খামতি?
পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, সমুদ্রে চর পড়ায় সৈকত থেকে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে গেলে তবেই জল মেলে। সৈকতের সামনে প্রায় ৪০ ফুট চওড়া খাল তৈরি হয়েছে। ভাটার সময়ে ওই খালে জল থাকে না। তাই শুকনো খাল পার হয়ে সমুদ্রে স্নান করতে যান পর্যটকেরা। কিন্তু জোয়ার এসে গেলে খাল ডুবে যায়। ফলে তখন সমুদ্র থেকে ফিরতে গেলে বিপদের আশঙ্কা বাড়ে। পর্যটকদের তলিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
সমুদ্র-স্নানের পরে গায়ের বালি ধুয়ে ফেলার জন্য গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ থেকে পিকনিক স্পটের পাশেই প্রায় এক বিঘার একটি পুকুর কাটা হয়েছিল। তা মজে গিয়েছে। জল থাকে না বললেই চলে। গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা নেই। যেখানে পিকনিক হওয়ার কথা, সেখানে অনেক সময়ে জল জমে যায়। আশপাশের আবর্জনার স্তূপ জমছে। পিকনিক স্পটে ঢোকার প্রায় এক কিলোমিটার আগে ফ্রেজ়ারগঞ্জ মোড় থেকে ত্রিফলা আলো লাগানো হয়েছিল এক সময়ে। এখন জ্বলে না। সন্ধ্যার পরে রাস্তা অন্ধকারে ডুবে যায়।
বকখালি-ফ্রেজ়ারগগঞ্জ লজ ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিদ্যুৎকুমার দিন্দা বলেন, ‘‘বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি। পর্যটনকেন্দ্রে নানা সমস্যা থাকায় পর্যটকদের সমস্যা হচ্ছে। আমাদের ব্যবসা মার খাচ্ছে। কিন্তু বিভাগীয় দফতর কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’
বকখালি পর্যটনকেন্দ্র দেখভালের জন্য গঙ্গাসাগর-বকখালি উন্নয়ন পর্ষদ রয়েছে। পর্ষদের নির্বাহী আধিকারিক নীলাঞ্জনা তফাদার খামতি কথা মানছেন। অবশ্য একই সঙ্গে তাঁর দাবি, পরিকাঠামোগত উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অভিষেক দাস বলেন, ‘‘বন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে যে সব জায়গায় ঝাউ গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে, সেখানে নতুন করে লাগানো যায় কি না, দেখা হবে। আবার আগের অবস্থায় পর্যটনকেন্দ্র ফিরে আসবে।’’