Stagnant water

অশোকনগরের পথে ঘুরছে ভেলা 

প্রায় ২৫০টি পরিবার আড়াই মাস ধরে এই অবস্থায় রয়েছেন। আরও তিন মাস এই পরিস্থিতিতে তাঁদের কাটাতে হবে বলে মনে করছেন জলবন্দি মানুষজন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাবড়া শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ০৫:৩৯
Share:

জলের মধ্যে বসবাস। ছবি: সুজিত দুয়ারি

জলমগ্ন এলাকা। কোথাও কোমর সামান, কোথাও হাঁটু সমান জল। ঘরের মধ্যেও জল ঢুকে পড়েছে। ওই জমা জল পেরিয়ে মানুষ যাতায়াত করছেন। বড় গাড়ির টিউবের উপরে কাঠের পাটাতন দিয়ে বা কলাগাছের ভেলা তৈরি করে তাতে চড়ে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন।

Advertisement

পুরসভার পক্ষ থেকে অস্থায়ী বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সাঁকোতে উঠতে গেলে আগে এক হাঁটু জল পেরিয়ে আসতে হচ্ছে। মহিলারা শাড়ি হাঁটু পর্যন্ত তুলে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছেন। সাপ ও মশার উপদ্রব শুরু হয়েছে। জলবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে। করোনার মধ্যে জলমগ্ন মানুষ ডেঙ্গির আশঙ্কা করছেন।

প্রায় ২৫০টি পরিবার আড়াই মাস ধরে এই অবস্থায় রয়েছেন। আরও তিন মাস এই পরিস্থিতিতে তাঁদের কাটাতে হবে বলে মনে করছেন জলবন্দি মানুষজন। ঘরে জল ঢোকায় অনেকেই বাড়ি ঘর ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে বা স্কুল আশ্রয় নিয়েছেন।

Advertisement

এমনই পরিস্থিতি হাবড়া শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের লোকনাথ সরণি, বাহান্ন পরিবার, নতুনপাড়া, উত্তর হাবড়া পদ্মার পাড় এলাকার মানুষের। বুধবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, কোথাও কোমর সমান জল, কোথাও হাঁটুজল রাস্তায়। পানীয় জলের কল, বাথরুম বেশিরভাগই ডুবে রয়েছে। বাদ যায়নি সরকারি টিউবওয়েল। বাধ্য হয়ে দূর থেকে তাদের পানীয় জল নিয়ে আসতে হচ্ছে অথবা ভরসা করতে হচ্ছে কেনা জলের উপরে। ২০-২৫ টাকা খরচ করে ২০ লিটার পানীয় জল কিনতে হচ্ছে।

সূর্যের তাপে কিছুটা জল কমেছে। কিন্তু সামান্য বৃষ্টি হলেই বেড়ে যাচ্ছে। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, এই জল আগামী তিনমাস নামবে না। কারণ, এলাকাটি নিচু থাকায় জন্য সমস্ত এলাকার জল ওই এলাকায় এসে জমেছে। এলাকায় কোনও নিকাশি নেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং পুরসভাকে এ বিষয়ে জানানো হলেও ব্যবস্থা হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

জল জমার কয়েক সপ্তাহ বাদে হাবড়া পুরসভার তরফে রাস্তার দু’পাশ থেকে কোথাও এক ফুট বা কোথাও দেড় ফুট চওড়া বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। লোকনাথ সরণীর বাসিন্দা শ্যামল বাড়ুই বলেন, ‘‘ঘরের মধ্যে এক হাঁটুর বেশি জল জমে গিয়েছে। রাস্তায় কোমর সমান জল। বেশ কিছু দিন কষ্ট করে বাড়িতে ছিলাম। তবে বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকায় আতঙ্কে আছি। যখন তখন সাপ, বিষাক্ত পোকামাকড় বাড়িতে ঢুকছে। তাই কুমড়ো কাশীপুরের এক ব্যক্তির বাড়িতে বলে কয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছি।’’

নতুনপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাধনা সূত্রধর নামে এক মহিলা জানালেন, বাড়ির সামনে কোমর সমান জল। কিছু লোকের হাতে পায়ে ঘা হয়ে গিয়েছে। পুরসভার থেকেও কোনও সাহায্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। মিঠু ব্যাপারী, প্রহ্লাদ বারুই, ধনঞ্জয় ঘোষ, বিজন হালদারদের মতো অনেকেই বাড়িতে জল উঠে যাওয়ায় ভাড়া বাড়িতে চলে গিয়েছেন। বেশ কিছু পরিবার নিজেরাই রান্না করে খাওয়া-দাওয়া করছেন এলাকার দু’টি বিদ্যালয়ে।

কেন এই এলাকায় জল জমছে?

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এক সময়ে উত্তর হাবড়ার এই জায়গা থেকে দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে জল বেরিয়ে যেত অন্যত্র। একটি হাবড়া যশোর রোডের নীচ থেকে জয়গাছি হয়ে গোয়ালবাটির উপর থেকে নাংলা বিলে গিয়ে পড়ত। এই এলাকার জমা জল সরার আর একটি পথ ছিল, হাবড়া কামিনীকুমার স্কুলের পাশ থেকে জিরাটের নীচ থেকে যশোর রোড হয়ে শহর ছাড়িয়ে গুমা খাল। কিন্তু গত তিন দশক ধরে ধীরে ধীরে অবৈধ নির্মাণের কারণে জল যাওয়ার সমস্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

হাবড়ার পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তারক দাস বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে মানুষের জন্য বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, তাঁদের যে কোনও প্রয়োজনে পুরসভা পাশে আছে। আমরা কয়েকবার ত্রাণ দিয়েছি। এক বছরের বছরের মধ্যেই নিকাশির ব্যবস্থা করা হবে। আসলে এলাকাটি নিচু হওয়ায় জল জমেছে।’’ পুরপ্রশাসক নীলিমেশ দাস বলেন, ‘‘ওই এলাকায় অতীতে পদ্মা নালা ছিল। পদ্মা জবরদখল করে বাড়িঘর তৈরি হয়েছে। হাবড়া জমা জল ওখানে জমা হত। সেখানেই বসতি তৈরি হয়েছে। ওই এলাকায় পাম্প স্টেশন তৈরি করে জমা জল বের করার পরিকল্পনা রয়েছে। শহরে নিকাশি সমস্যা মেটাতে মাস্টার প্ল্যান রাজ্য সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।’’ পুরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডেরও একই পরিস্থিতি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement