গোবরডাঙার টাউনহল। —নিজস্ব চিত্র।
আমার মনে হয়, রাস্তাঘাটের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে গোবরডাঙায়। যথেষ্ট ভাল রাস্তাঘাট আমরা দেখতে পাচ্ছি। অনেক ভিতরের দিকের রাস্তাও পিচের হয়েছে। পাশাপাশি ঢালাই রাস্তাও আছে । সে রাস্তাগুলি যথেষ্ট উন্নত। নাগরিক হিসেবে আমাদেরও একটু রাস্তাগুলোর যত্ন নেওয়া উচিত। রাস্তায় প্যান্ডেল করার জন্য যদি আমরা রাস্তা খুঁড়ি, তবে সেই জায়গাটা ভরাট করে দেওয়ার নৈতিক দায়িত্বও আমাদের। প্রশাসন সেটা কেন করতে দিল, এই প্রশ্ন না তুলে আমাদেরই নাগরিক হিসাবে ওই জায়গাটা ভরাট করে দেওয়া উচিত। তবে, রাস্তাঘাটের বিষয়ে পুরসভা যথেষ্ট সাফল্যের দাবি করতে পারে।
গত পুরবোর্ড আসার পর বাড়ি বাড়ি নোংরা নেওয়া এবং রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখার যে নিয়মিত ব্যবস্থা করেছে, তা কিন্তু যথেষ্ট উন্নত। করোনাকালে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও পুরসভা তাদের পরিচ্ছন্নতার প্রশ্নে পরিষেবা চালু রেখেছিল। কোনও এক-আধ জায়গায় হয়তো বা চোখে পড়ার মতন কিছু নোংরা থাকতে পারে কিন্তু সেটা খুবই কম। পরিচ্ছন্নতার প্রশ্নে পুরসভার সাফল্য চূড়ায় না পৌঁছলেও যথেষ্টই করেছে।
এলাকায় এলাকায় পুরসভার পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা যেমন থাকার, সেটাই আছে। অনেক ক্ষেত্রে নাগরিকরা পুরসভার উপর দায় ছেড়ে দিয়ে জল অপচয় করেছি। কল ভেঙে নিয়েছি। পুরসভা কেন সারাই করেনি সেই প্রশ্ন তুলেছি। পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের হলেও নাগরিক হিসেবে আমাদেরও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়া উচিত। সুতরাং পুরসভার একটু তদারকি ক্ষেত্রে সচেতন হলে ভাল লাগত। তবে আমি পুরসভার থেকেও নাগরিকদেরদের দায়ী করবো বেশি। বলব, পুরসভার সাফল্য ভালই।
গোবরডাঙার দু’দিকে দুটো বড় জলাধার রয়েছে— এক দিকে কঙ্কনা বাওড়, আর এক দিকে যমুনা নদী। সেই দু’টিকে ব্যবহার করে আমাদের যে উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা করা সম্ভব ছিল, তা হয়নি।একটু পরিকল্পনা নিয়ে পুরবোর্ড যদি নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করার চেষ্টা করে, তা হলে এখনকার থেকে অনেক ভাল করা যায়। পুরসভার কিছু ঘাটতি রয়ে গিয়েছে। আমরা আশা করব অচিরেই সেটা যে দলই আসুক দূর করে দেবে।
গোটা পৌর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় যেখানে একটা সময় অন্ধকারকে দুষ্কৃতীরা আশ্রয় করত, সেটা এখন অনেকটাই নেই। অনেকটাই ভাল ব্যবস্থা হয়েছে. উন্নত শহরকে অনুসরণ করে আরও ভাল করা যেতে পারে। তবে সাফল্য আলোর ক্ষেত্রে ভালই।
ন্যূনতম যে পরিষেবাগুলো থাকার কথা, তার সম্পর্কে বলা ছাড়াও আমাদের কিছু চাওয়া থেকেই যায় নাগরিক হিসাবে। প্রথমত, গোবরডাঙা পুরসভা এলাকাকে গত পুরবোর্ড সম্পূর্ণ প্লাস্টিক মুক্ত করেছিল। কোনও দোকানে ক্যারিব্যাগ দেওয়া হত না। মুদি দোকান বা কোন সব্জির দোকানেও দেওয়া হত না। কিন্তু আমাদের এলাকার ভৌগোলিক অবস্থানজনিত সমস্যার কারণে সেটা জারি রাখতে পারেনি। তা ছাড়া নিজেদের কিছু শৈথিল্যও ছিল যেটা উপেক্ষা করার নয়। আমরা চাই যে গোবরডাঙা পুরসভা সম্পূর্ণ প্লাস্টিক মুক্ত হোক। গোবরডাঙার পুর টাউন হল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা থিয়েটার মঞ্চস্থের উপযোগী হয়নি। সাউন্ড সিস্টেম থেকে শুরু করে তার এসি— মোটেও আধুনিক হয়নি। অনতিবিলম্বে এটা যেন দেখা হয়।
আর একটা বিষয় অবশ্যই দরকার— স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। হাসপাতাল যদিও বা চালু করা হল কিন্তু সেটুকুই সার। সেই অর্থে নাগরিকদের জন্য যে যে পরিষেবা পাওয়া দরকার নাগরিকরা সেগুলো ঠিক মতো পান না। সেগুলো আরও আধুনিক করে তুলতে হবে। গোবরডাঙার সঙ্গে অনেকটা বড় অঞ্চল জড়িত। সাধারণ মানুষকে নার্সিংহোমের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে সরকারি উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থার শরিক করতে হবে।
গোবরডাঙার পরিবহণ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বলব যে, কলকাতা পর্যন্ত সে রকম কোনও বাস রুট নেই। সরকারি বাসের কোনও ব্যবস্থা নেই। সরকারি বাস চালু হলে ভাল হয়।
আর গোবরডাঙা লোকাল চালুর ক্ষেত্রে বা দুই তিন নম্বরের দিকে টিকিট কাউন্টার খুব দরকার। এক্ষেত্রে যদি এই পুরবোর্ড সাধারণ মানুষের কথা ভেবে রেলের কাছে দাবি তোলে তা হলে একটা বড় সুরাহা হতে পারে। খেলার মাঠগুলোকে আরও সক্রিয় করে তোলা উচিত।