আরাবুল ইসলাম। — ফাইল চিত্র।
দলীয় কর্মী সম্মেলনে উপস্থিতির হার কম দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম।
রবিবার চিলেতলা অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ভাঙড়ের ভোগালি ২ অঞ্চলের কর্মিসভা ছিল। ছিলেন সওকাত মোল্লা, আরাবুল ইসলাম, আব্দুর রহিম, হাকিমুল ইসলাম, মোমিনুল ইসলাম, ওদুত মোল্লা, মোদাচ্ছের হোসেন-সহ ব্লক ও অঞ্চল নেতৃত্ব। ভোগালি ২ অঞ্চলের কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে আগেই একটি প্রস্তুতি বৈঠক করা হয়। ওই বৈঠকে সওকাত মোল্লা, আরাবুল ইসলামেরা অঞ্চল কমিটির নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, এ দিনের কর্মী সম্মেলনে কমপক্ষে দেড়-দু’হাজার লোক যেন আসেন। সম্মেলনের পরে কর্মীদের দুপুরের আহারের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এ দিন সম্মেলন শুরু হতে দেখা যায় হাতে গোনা ২০০-৩০০ কর্মী এসেছেন।
দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ আরাবুল পঞ্চায়েত প্রধান মোদাচ্ছের হোসেনকে মঞ্চ থেকে বলেন, ‘‘একটা অঞ্চলের সমস্ত কর্মীদের এক জায়গায় ডেকে আলোচনা করতে সমস্যা কোথায়? এ ভাবে চলতে পারে না। এমনিতেই এই অঞ্চলে আমরা বিধানসভা ভোটের নিরিখে অনেকটাই পিছিয়ে আছি। বুথস্তরের কর্মীদের আরও সক্রিয় হতে হবে।’’
আরাবুল যখন এ কথা বলছেন তখন মঞ্চে বসেছিলেন ভাঙড়ের পর্যবেক্ষক, তথা বিধায়ক সওকাত মোল্লা। আরাবুলের কথার সমর্থনে সওকাত বলেন, ‘‘ফের এই কর্মী সম্মেলন করতে হবে। কী কারণে এত কম লোক হল, জানি না। সম্মেলনের পরে সমস্ত অঞ্চল কমিটিদের নিয়ে আলোচনায় বসা হবে। যদি আর্থিক কোনও সমস্যা থেকে থাকে, তা হলে অঞ্চল কমিটি আমাদের জানাতে পারত। আজ সম্মেলন শেষে এখানে যাঁরা নেতৃত্বে আছেন, তাঁদের বলব, যাঁরা দায়িত্ব নিতে পারবেন না তাঁরা দায়িত্ব ছেড়ে দিন।’’ সওকাতের মতে, এই অঞ্চলে ১৮টি বুথ আছে। ৩০-৪০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। দলের কর্মীদের প্রত্যেকের কাছে পৌঁছতে হবে। মানুষের সুবিধা অসুবিধা দেখতে হবে। বিধায়কের কথায়, ‘‘আমাদের দুর্বলতা, ব্যর্থতা সমস্যায় ফেলতে পারে।’’
দলের একাংশের দুর্নীতির কথাও এ দিন টেনে আনেন সওকাত। বলেন, ‘‘নারায়ণপুর অঞ্চলে আমাদের দলের এক নেতা বার্ধক্য ভাতা পাইয়ে দেওয়ার নামে এক বৃদ্ধের কাছ থেকে চার হাজার টাকা নিয়েছেন। আমাদের দলে থেকে এ সব করা যাবে না। দলে এ ধরনের কিছু নেতা আছেন। তাঁরা বিচারের নামে, সরকারি প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার নামে এ ভাবে টাকা তোলেন। দলে এই ধরনের নেতা থাকার দরকার নেই। এমন অভিযোগ পেলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দল থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেব। এই সব নেতার কারণে দলের মুখ পুড়ছে। আমাদের মুখ পুড়ছে। দলের সর্বনাশ হচ্ছে।’’ তাঁর মতে, ‘‘যদি টাকা নিতে হয়, তা হলে অন্য ব্যবসা করুন। রাজনীতি করতে আসবেন না। কোনও গরিব মানুষের থেকে টাকা নেওয়া যাবে না।’’
সম্প্রতি ভোগালি ২ অঞ্চলে ২২০ জনের অঞ্চল কমিটি গঠন করা হয়। এ দিন সম্মেলন শেষে অঞ্চল কমিটির সদস্যেরা দলীয় নেতৃত্বের সামনে একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার শুরু করেন। আরাবুল পরে বলেন, ‘‘এই অঞ্চলে এমনিতে সাংগঠনিক কোনও দুর্বলতা নেই। দুপুরে যেহেতু খাবারের আয়োজন করতে বলা হয়েছিল, আর্থিক সমস্যার কারণে তাই সকলকে সম্মেলনে ডাকেননি অঞ্চল নেতৃত্ব। যে কারণে সমস্যা তৈরি হয়েছে।’’
অনুষ্ঠানের পরে সকলে খাওয়া-দাওয়া করেছিলেন। এ বিষয়ে ভোগালি ২ পঞ্চায়েতের প্রধান মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, ‘‘পনেরো বছর ধরে পঞ্চায়েতের দায়িত্বে আছি। আগে কখনও এ ধরনের কর্মী সম্মেলন করে মানুষের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে কিছু ভুল-ত্রুটি হতে পারে। তবে তিনি এ-ও বলেন, ‘‘অঞ্চল কমিটি এবং বুথ নেতৃত্ব সকলেই উপস্থিত ছিলেন। আমরা সাধ্য মতো চেষ্টা করেছি সকলকে এক জায়গায় আনার।
দিন কয়েক আগে ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী বলেছিলেন, পুলিশ তৃণমূলের হয়ে ‘ব্যাটিং’ করছে। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আরাবুল বলেন, ‘‘পুলিশ বিরোধী দলকে নিরাপত্তা দেয়। পুলিশ না থাকলে নওশাদ ভাঙড়ে ঢুকতে পারতেন না। পুলিশ না থাকলে ওদের দলীয় কর্মীদের পিঠের চামড়া থাকত না।’’ নওশাদ এর প্রেক্ষিতে বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে কোনও দেহরক্ষী নেই। সারা বাংলায় আমি একাই ঘুরে বেড়াচ্ছি। এটা তো ঠিক, তৃণমূল পুলিশ-নির্ভর দল হয়ে গিয়েছে। এখানে শাসক দল আমাদের কর্মীকে মারছে, আবার পুলিশকে দিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাচ্ছে।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আমি আইন, বিচার ব্যবস্থার উপরে ভরসা রেখে চলি, তৃণমূল পুলিশের উপরে ভরসা রেখে চলে।’’