প্রতীকী চিত্র।
তৃণমূল নেতা ও তাঁর আইনজীবী ছেলের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাটের অভিযোগ উঠল দলেরই একাংশের বিরুদ্ধে। বাবা-ছেলেকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ।
সোমবার রাতে হাসনাবাদের ২ নম্বর ভবানীপুর পঞ্চায়েত এলাকার এই ঘটনায় গুলি চলে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। কয়েকটি দোকান, বাড়িতে ভাঙচুর হয়। ঘটনার পর থেকে তৃণমূলের কয়েকজন আতঙ্কে বাড়িছাড়া বলেও অভিযোগ দলের একাংশের। ৪ জনকে গ্রেফতার করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। বসিরহাট পুলিশ জেলার সুপার জবি থমাস কে বলেন, ‘‘বাকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
গোটা ঘটনায় দলের গোষ্ঠীকোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়ায় অস্বস্তিতে উপরতলার নেতারা। স্থানীয় বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘এই ঘটনা কাঙ্খিত নয়। মারামারির ঘটনায় দলের যারা যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে দল উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করবে।’’
বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে হাসনাবাদ ১ ও ২ নম্বর পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলে বিজেপি। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছেও অভিযোগ করে তারা। এ বার একই অভিযোগ তুলছে শাসকদলের একাংশ। তৃণমূলের হাসনাবাদ দক্ষিণ ব্লক কার্যকরী সভাপতি সাবুর আলি মোল্লা বলেন, ‘‘দলের কিছু লোক যে ভাবে এলাকায় লুটপাট, ভাঙচুর চালাচ্ছে, বিরোধীদের জরিমানা করছে, মাছের ভেড়িতে ডাকাতি করছে, তা কোনও ভাবেই সমর্থন করা যায় না। এ সবের প্রতিবাদ করায় দলের লোককেও রেয়াত করছে না ওরা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কী চেয়েছিলাম, আর কী পেলাম!’’
তৃণমূল নেতা ইউনিস মোল্লার নেতৃত্বে দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। সাবুরের ছেলে, বসিরহাট আদালতের আইনজীবী জিয়ারুল মোল্লা বলেন, ‘‘বরাবরই বাবা তৃণমূল করেন। স্পষ্টকথার মানুষ। নব্য তৃণমূল যে ভাবে সাধারণ মানুষের উপরে অত্যাচার করছে, তা সহ্য করা যায় না বলে বাবা প্রতিবাদ করেছিলেন। এর ফলে এলাকার তৃণমূল নেতা ইউনিস মোল্লা দুষ্কৃতীদের নিয়ে বাড়িতে চড়াও হয়ে মারধর, লুটপাট করেছে।’’ তাঁর অভিযোগ, তাঁদের বাড়ি-সহ আশপাশের আরও ১৫-২০টি বাড়িতে ভাঙচুর চালায় হামলাকারীরা। গুলিও ছোড়ে। বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দা তরিকুল আদলদার, রশিদ আদলদার, দারবস্ক আদলদাররা নিজেদের শাসকদলের কর্মী বলে দাবি করে জানান, তৃণমূলের লোকজনই মাঝে মধ্যে অনেকের উপরে হামলা চালাচ্ছে। মেছোভেড়িতে ডাকাতি করছে। জমি দখল করছে। রশিদের কথায়, ‘‘আমাদের অনেকের বাড়ি ভেঙে দিয়েছে। বন্দুক দেখিয়ে জানান গ্রামছাড়ার হুমকি দিয়েছে।’’ তাঁদের কেউ কেউ রাতেই এলাকা ছেড়েছেন বলে জানালেন তরিকুলরা।
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করে ইউনিস বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ। বাড়িতেই ছিলাম। রাতে শুনি আমাদের একটি ছেলে দোকানে বসে থাকার সময়ে বিরোধীরা মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। সাবুরের ছেলে জিয়ারুল পরিকল্পনা করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ইদানীং ওরা তলে তলে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলে জানতে পেরেছি।’’ ইউনিসের দাবি, স্থানীয় কিছু মানুষ দলের কর্মীর উপরে হামলার প্রতিবাদ করেছেন। তিনি বা তাঁর অনুগামীরা এই ঘটনায় জড়িত নন বলেই দাবি ইউনিসের।
বিজেপি নেতা ফিরোজ কামাল গাজি বলেন, ‘‘ভোটের পর থেকে ওরা যে সন্ত্রাস চালাচ্ছে, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই আমরা অভিযোগ করে আসছি। এখন তৃণমূলের লোকজনও মুখ খুলতে শুরু করেছেন।’’