দুর্ঘটনার পরে ক্রেন দিয়ে ট্রাকটিকে সরিয়ে বার করা হচ্ছে মৃতদেহ। বিএসএফ ক্যাম্প মোড়ে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
এ বার বনগাঁয় ট্রাক দুর্ঘটনায় জোড়া মৃত্যু। ফের একবার শহরে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণের দাবিও উঠল।
সোমবার দুপুরে শহরের বিএসএফ ক্যাম্প মোড় এলাকায়, যশোর রোডে একটি ট্রাক ঘোরাতে গিয়ে কিছুটা পিছিয়ে এলে পথচারী লিমা মণ্ডল (২৭) ও তাঁর পাঁচ বছরের ছেলে হামিদ পিষে যায়। ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়।
মৃতদের বাড়ি স্থানীয় জয়পুরে। দুর্ঘটনাস্থলেই দেহ দু’টি ট্রাকের চাকায় পিষ্ট অবস্থায় বেশ কিছুক্ষণ পড়ে চিল। পুলিশ ক্রেন এনে দেহ দু’টি বের করে ময়না-তদন্তে পাঠায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চালক ও খালাসি দু'জনেই নেশাগ্রস্ত ছিলেন। পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চালককে আটক করা হয়েছে। খালাসি ছিল কি না, দেখা হচ্ছে।
কিন্তু এই আশ্বাসে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। তাঁদের প্রশ্ন, আর কত রক্ত ঝরলে প্রশাসনের হুঁশ ফিরবে? ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে কবে? স্ত্রী লিমা ও ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন লিটন মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। কাকে নিয়ে বেঁচে থাকব!’’
গত কয়েক বছরে বনগাঁ শহরে ট্রাকের ধাক্কায় হতাহত হওয়ার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। শহরবাসী জীবন হাতে নিয়ে পথে বের হন। এমনিতেই সঙ্কীর্ণ রাস্তার কারণে শহরে পথচলা দায়। তার উপর নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে শহরে ২৪ ঘণ্টা ট্রাক চলে। অথচ, কয়েক বছর আগেও শহরে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রিত ছিল। ২০২০ সালে শহরে একটি বড়সড় দুর্ঘটনার পরে ট্রাক নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ করে বনগাঁ জেলা পুলিশ। ওই সময় দিনের বেলায় শহরে ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে সড়কগুলিতে অস্থায়ী ‘ড্রপ গেট’ তৈরি করা হয়। বাইরে থেকে কোনও ট্রাক শহরে ঢুকতে গেলে তা আটকে দেওয়া হত। শহরে ঢোকার পাঁচ জায়গায় (যশোর রোডে দু’টি, রামনগর রোড, বাগদা ও চাকদা রোডে একটি করে) ‘ড্রপ গেট’ করা হয়েছিল। যানজট এবং দুর্ঘটনা কমাতে পুলিশ প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সকাল ৭টা থেকে ১২টা এবং দুপুর ২টো থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত শহরে ট্রাক ও ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হবে। দুপুর ১২টা থেকে ২টো পর্যন্ত চলবে ট্রাক। কিছুদিন সব ঠিকঠাক চললেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সে সব বিধিনিষেধ চৌপাট হয়ে যায়।
শহরবাসীর অনেকেরই অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই বিধিনিষেধ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। প্রসঙ্গত, পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে স্থলপথে বাংলাদেশের সঙ্গে পণ্য রফতানির কারণে শ’য়ে শ’য়ে ট্রাক রোজ শহর দিয়ে যাতায়াত করে। শহরবাসীর আরও অভিযোগ, সঙ্কীর্ণ রাস্তায় দুর্ঘটনার আরও একটি বড় কারণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য বিনা অনুমতিতে অবৈধ ভাবে তৈরি অস্থায়ী তোরণ। যা অনুষ্ঠানের পরেও দীর্ঘ দিন থেকে যায়। এখন শহরে দুর্গাপুজোর তোরণ রয়ে গিয়েছে।
অনিয়ন্ত্রিত ট্রাক চলাচল নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলিও। বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের অভিযোগ, বিএসএফ ক্যাম্প মোড় এলাকায় যাঁরা যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকেন, তাঁরা সেই কাজের চেয়ে ট্রাকচালকদের কাছ থেকে টাকা তুলতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। তা ছাড়া, শহরে আসা ট্রাকে অনেক ক্ষেত্রেই খালাসি থাকেন না। চালকেরা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় চালান। ফলে, দুর্ঘটনা বাড়ছে।’’
বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘শহরে ট্রাক নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ প্রশাসন ও পরিবহণ দফতরে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছি। রোজ রাতে বাণিজ্যের জন্য ট্রাকের স্লট বুকিংয়ের নম্বর পরিবহণ দফতরের কাছে আসার আগেই বিএসএফ ক্যাম্প মোড়ের কাছে ট্রাকের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। সাধারণ মানুষের যাতায়াতে অসুবিধা হয়।’’