অমল স্যারের আশ্রমে ভবিষ্যৎ গড়ছে বিপুলরা

জনা তিরিশ শিশুকে নিয়ে চলছে বাসন্তী ব্লকের ভরতগড় পঞ্চায়েতের মহেশপুর গ্রামে রাখালচন্দ্র সেবাশ্রম।

Advertisement

প্রসেনজিৎ সাহা

বাসন্তী শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২০
Share:

মহেশপুর যশোদা বিদ্যাপীঠে শিক্ষকতা করতেন অমল। বিয়ে-থা করেননি।

চাকরি জীবনেই কাজটা শুরু করেছিলেন। চাকরি থেকে অবসরের পরেও বিশ্রাম নেননি মাস্টারমশাই। নিজের বাবার নামে তৈরি আশ্রমে লালনপালন করছেন দুঃস্থ, অনাথ শিশুদের।

Advertisement

জনা তিরিশ শিশুকে নিয়ে চলছে বাসন্তী ব্লকের ভরতগড় পঞ্চায়েতের মহেশপুর গ্রামে রাখালচন্দ্র সেবাশ্রম। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে অমল পণ্ডিতই এই সব শিশুর অভিভাবক।

মহেশপুর যশোদা বিদ্যাপীঠে শিক্ষকতা করতেন অমল। বিয়ে-থা করেননি। পাছে এই সব শিশুদের দেখভালে কোনও খামতি পড়ে। শিক্ষক সুধীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের কাছ থেকেই পেয়েছিলেন সমাজসেবা করার মানসিক রসদ। পেয়েছিলেন দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা।

Advertisement

১৯৯০ সালে ভরতগড়ে তৈরি হয়েছিল সেবাশ্রম। একে একে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের আদিবাসী ও দুঃস্থ পরিবার থেকে শিশুরা আসতে শুরু করে অমল স্যারের কাছে। আশ্রমেই চলে শিক্ষাদান। পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি আঁকা, গানবাজনা, খেলাধুলার দিকেও নজর আছে স্যারের। আশ্রমেই খাওয়া-দাওয়া, থাকার ব্যবস্থা।

প্রথমে দু’চারজনকে নিয়ে শুরু করলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ছাত্র সংখ্যা। বেতনের গোটা টাকাটাই স্যার খরচ করতেন আশ্রমের পিছনে। সে সময়ে গ্রামের বেশ কিছু মানুষও পাশে দাঁড়ান। নিজেদের খেতে সব্জি, চাল দিয়ে সাহায্য করতেন অনেকেই। এখনও অনেক গ্রামবাসী কেউ কায়িক শ্রম দিয়ে, কেউ মালপত্র পাঠিয়ে অমল স্যারের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই আশ্রমে থেকে পড়াশোনা করে অনেকেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন জীবনে। কেউ স্কুল-কলেজের শিক্ষক হয়েছেন, কেউ ইঞ্জিনিয়ার। কীর্তনের দলে নাম লিখিয়েও নাম করেছেন কেউ। আশ্রমের প্রাক্তনীরাও স্যারের পাশে আছেন।

২০১৫ সালে স্কুলের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ নিয়েছেন অমল। তাঁর অবর্তমানে কী ভাবে আশ্রম চলবে, তা নিয়ে এখন যথেষ্ট চিন্তিত। বললেন, ‘‘আমার বিশ্বাস, যে কাজ আমি শুরু করেছি, তা নিশ্চয়ই এগিয়ে যাবে।’’

এলাকার বাসিন্দা নারায়ণ মান্না বলেন, ‘‘স্যারের সঙ্গে আমরাও অনেকে এই আশ্রমের কাজে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে পড়েছি। উনি ছিলেন বলেই সুন্দরবনের অনেক দুঃস্থ ছেলে শিক্ষার আলো পেল। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হল।’’ আশ্রমের আবাসিক দেবব্রত, বিক্রম, বিপুলরা বলে, “স্যারের কাছে এসে না পড়লে কোথায় যে হারিয়ে যেতাম জানি না। বড় হয়ে স্যারের এই লড়াইয়ে পাশে দাঁড়াতে চাই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement