চিহ্ন: এখানেই ঘটেছিল বিস্ফোরণ। নিজস্ব চিত্র
আগে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে দিন মজুরের কাজ করতেন। ঘোরাঘুরির সঙ্গে সে কাজে খাটনি বড়। তাই বছর দু’য়েক আগে বাজি কারখানায় কাজ নিয়েছিলেন রাম বেসরা।
শুক্রবার নৈহাটির দেবকে বাজি কারখানায় আগুন নেভার পরে স্বামীর দেহ চিনতে পারেননি বুধনি বেসরা। ঝলসে যাওয়া দেহে লেপ্টে থাকা পোশাকের টুকরো দেখে দেহ শনাক্ত করেছিলেন বুধনি। শনিবার সকাল থেকেই কেঁদে চলেছিলেন। বাড়িতে রয়েছে ছেলে রঞ্জিত। এখনও পর্যন্ত সে কোনও কাজ পায়নি। রামের রোজগারে চলত সংসার।
বিকেলে তিনটি দেহ ফিরেছে দেবকে। চারদিকে তখন কান্নার রোল। আরও দু’টি দেহ ফিরেছে পড়শি গ্রাম কুলিয়াগড়ে। শোকে সেখানের বাতাসও ভারী।
এত কিছুর পরে ওই গ্রামের বাসিন্দারা পরিবারের লোকেদের কি আর বাজি কারখানায় কাজ করতে পাঠাবেন? গ্রামের বাসিন্দা বছর বাহান্নর সুকোমল হালদার বলেন, ‘‘পাঠাতে তো ইচ্ছা করে না। কিন্তু না পাঠিয়ে উপায় কী! খাব কী? সংসারে পাঁচ জন লোক। বড় ছেলে বাজি কারখানায় কাজ করে। ওর রোজগারেই সংসার চলে। বাড়ির সকলেরই মন খারাপ। কয়েক দিন কেটে গেলেই ফের কারখানা চালু হবে। শ্রমিকেরাও সব কাজে যাবে।’’
এলাকার বাসিন্দারা জানান, ওই এলাকায় রোজগারের একমাত্র অবলম্বন বাজি তৈরি। কেউ কারখানায় কাজ করেন। কেউ বা মজুরির বিনিময়ে বাড়িতে বাজি বানান। দীর্ঘ দিন ধরেই দেবকে চলছে বাজির এমন কারবার। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাজি কারখানার শ্রমিকেরা দৈনিক ২০০-২৫০ টাকা মজুরি পান। পুজো, দীপাবলির সময়ে কাজের চাপ থাকে। তখন মজুরি মেলে প্রায় দ্বিগুণ। এলাকার কয়েক জনের সামান্য চাষের জমি রয়েছে। বাকিদের রোজগারের ভরসা সেই বাজির কারবার।
পুলিশ দাবি করেছে, শুক্রবারের ঘটনার পরে এলাকার সব অবৈধ বাজি কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে এলাকার বাসিন্দাদের রুজির কী হবে?
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা শুক্রবারই বলেছিলেন, বিকল্প রোজগারের ব্যবস্থা না হলে কারখানা বন্ধ করে সমস্যা মেটানো যাবে না। শনিবার তিনি দেবক যান। গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। তাঁদের কাছ থেকে বাজি কারখানার কাজ, মজুরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করেন।
বিকল্প রুজির ব্যবস্থার জন্য পুলিশ শনিবারই কাজ শুরু করেছে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে পুলিশ। তাঁদের বলা হয় বাজি কারখানাগুলিতে দেবক এবং আশপাশের গ্রামের কত জন বাসিন্দা শ্রমিকের কাজ করেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। পুলিশ সেই শ্রমিকদের নিয়ে একটি ‘তথ্য ব্যাঙ্ক’ তৈরি করবে। বাজি তৈরি ছাড়া তাঁদের আর কোনও বিষয়ে দক্ষতা রয়েছে, সেই তথ্যও থাকবে ব্যাঙ্কে। এক পুলিশ কর্তা জানান, দক্ষতা অনুযায়ী সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে তাঁদের কাজ দেওয়া হবে। বিকল্প রুজির ব্যবস্থা হলে শ্রমিকেরা ঝুঁকির পেশায় যাবেন না। তবে বাজি কারখানার মালিকদের পুলিশ রেয়াত করবে না।