এই সব কৃষিজমির দিয়েই নিয়ে যাওয়া হয় পাচারের গরু, দাবি বাগদার গ্রামবাসীর। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
বছর কয়েক বন্ধ থাকার পরে ফের উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার কুলিয়া সীমান্ত দিয়ে রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশে গরু পাচার শুরু হয়েছে। ফের আতঙ্কিত গ্রামবাসী। অতীতের দুঃস্বপ্নের স্মৃতি তাঁদের তাড়া করছে। খেতের ফসলও নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ।
বিএসএফ ও পুলিশের দাবি, পদক্ষেপ করা হচ্ছে। স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, রোজ গরু পাচার হচ্ছে না। সীমান্তে যে সব বাড়ির লোকজন গরু পোষেন, পাচারকারীরা তাঁদের কাছে টাকার বিনিময়ে গরু রেখে দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার গ্রামবাসী যে গরু বিক্রি করে দেন, তা কিনে নিচ্ছে পাচারকারী। সপ্তাহে এক বা দু’দিন সুযোগ বুঝে পাচার হচ্ছে। তবে এক সঙ্গে বেশি গরু পাচার হচ্ছে না।
বাগদা পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ গৌতম মণ্ডল বলেন, ‘‘ গরু পাচারের ফলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কুলিয়ার ডহরপোতা, রাজকলো এবং আউলডাঙা এলাকা দিয়েই পাচার হচ্ছে।’’
কয়েক বছর আগেও এই জেলার বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার সীমান্ত দিয়ে রমরমিয়ে গরু পাচার হত। সীমান্তের কিছু এলাকাকে বেছে নিয়ে পাচারকারীরা ‘সেফ করিডর’ হিসাবে ব্যবহার করত। তেমনই কিছু ‘সেফ করিডর’-এর মধ্যে ছিল এই কুলিয়া সীমান্তও। এখানে বিস্তীর্ণ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। রাতের অন্ধকারে ভিন রাজ্যে থেকে গরু বোঝাই শ’য়ে শ’য়ে ট্রাক এসে পৌঁছত সীমান্তের গ্রামগুলিতে। তারপর কৃষিখেত দিয়ে, গ্রামের পথ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে গিয়ে গরুগুলিকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হত। বিঘার পর বিঘা কৃষিখেত তছনছ হয়ে যেত। রাস্তা ভেঙে যেত। সাধারণ মানুষ রাতে বাড়ির বাইরে বেরোতে ভয় পেতেন। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পাচারকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এ দেশে এসে গরু নিয়ে গিয়েছে, এমন দৃশ্যও দেখেছেন গ্রামবাসী। কেউ প্রতিবাদের সাহস পেতেন না। পাচারকারীদের হাতে খুন-জখমের নজিরও আছে।
পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গরু পাচার বন্ধের নির্দেশ দেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও আংড়াইলে এসে একই নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপরে পুলিশ প্রশাসন ও বিএসএফের তৎপরতায় গরু পাচার কার্যত বন্ধ হয়। কিন্তু সীমান্তের মানুষের শান্তি ফের উবে গিয়েছে।
কুলিয়া সীমান্ত এলাকার চাষি সুভাষ সরকার বলেন, ‘‘রাতে পাচারকারীরা খেতের মধ্যে দিয়ে গরু নিয়ে যাচ্ছে। চাষের ক্ষতি হচ্ছে। তাদের হাতে থাকছে দা, কুড়ুল, ভোজালি। আমরা প্রতিবাদ করতে পারছি না।’’ ডহরপোতার চাষি কালীপদ বিশ্বাস বলেন, ‘‘রাত তিনটে থেকে গরু পাচার হচ্ছে। ধান, গম, কলাই, পটল চাষের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা চাই পুলিশ ও বিএসএফ কড়া পদক্ষেপ করুক।’’
তবে, গ্রামবাসী মানছেন, কয়েক বছর আগে ট্রাকে করে ভিন রাজ্য থেকে যে ভাবে গরু আনা হত, এখন তা হচ্ছে না। তাঁরা মনে করছেন, পাচারকারীরা রাজ্যের বিভিন্ন
গরুর হাট থেকে বাড়িতে রাখার নাম করে বা কৃষিকাজে লাগানোর নামে গরু নিয়ে আসছে। তারপর তা সীমান্তে গোপন এলাকায় রাখছে। সুযোগ বুঝে পাচার করছে।
চাষিরা জানিয়েছেন, সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর জন্য বিএসএফ সিসিক্যামেরা বসাতে উদ্যোগী হয়েছিল। কিন্তু তা এখনও সর্বত্র বসেনি। মাস দুয়েক আগে বিএসএফের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ করে বলা হয়েছিল, ওই এলাকার কিছু প্রভাবশালী সীমান্তে সিসিক্যামেরা বসাতে বাধা সৃষ্টি করছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।