সাগরে গ্রেফতার ৩

৪০ ঘণ্টা পরে ছাত্রীর দেহ ময়না-তদন্তে, ক্ষোভ মামার

এলাকার বাঁধ লাগোয়া ইউক্যালিপটাস গাছের ডাল থেকে সাগরের এক স্কুলছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ মিলেছিল মঙ্গলবার সকালে। তাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে তেতে উঠেছিল মুড়িগঙ্গা-১ পঞ্চায়েতের শীলপাড়া। কিন্তু দেহ মেলার ৪০ ঘণ্টা পরে, বুধবার রাতে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে তা ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাকদ্বী শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৬ ০২:২১
Share:

ধরা পড়েছে এরাই। নিজস্ব চিত্র।

এলাকার বাঁধ লাগোয়া ইউক্যালিপটাস গাছের ডাল থেকে সাগরের এক স্কুলছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ মিলেছিল মঙ্গলবার সকালে। তাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে তেতে উঠেছিল মুড়িগঙ্গা-১ পঞ্চায়েতের শীলপাড়া। কিন্তু দেহ মেলার ৪০ ঘণ্টা পরে, বুধবার রাতে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে তা ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়। কেননা, কোথায় ময়না-তদন্ত হবে এ নিয়েই এ দিন জট পাকায়। ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতেই পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করলেও মূল অভিযুক্তকে ধরা যায়নি। তার উপরে ময়না-তদন্তে দেরিতে পুলিশের বিরুদ্ধেই গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে ছাত্রীটির পরিবারের লোকেরা। এলাকাবাসীরও প্রশ্ন, কয়েক মাস আগে মর্গ চালু করা হলেও কেন ‘সুপার স্পেশ্যালিটি’র তকমা পাওয়া কাকদ্বীপ হাসপাতালে ময়না-তদন্ত হচ্ছে না?

Advertisement

পুলিশের দাবি, সোমবার প্রায় সাত ঘণ্টা বিক্ষোভের পরে দুপুর আড়াইটে নাগাদ তারা দেহটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। তার পরে সুরতহালের কারণে দেহটি হাসপাতালে পাঠানো যায়নি। বুধবার দুপুরে দেহটিকে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

কিন্তু তার পরেও কেন ময়না-তদন্ত হল না?

Advertisement

ওই হাসপাতাল সূত্রের খবর, মর্গ চালুর পরে এখানে সাধারণ ভাবে ময়না-তদন্ত হলেও যে সব অপমৃত্যু ‘স্পর্শকাতর’ বা যার পিছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে, সে সব ক্ষেত্রে এখানে ময়না-তদন্ত হয় না। ‘রেফার’ করা হয় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে। কেননা, এখানে ময়না-তদন্ত করার মতো দক্ষ শল্য চিকিৎসক (অটোপসি সার্জেন) নেই। মেডিক্যাল অফিসাররাই সামান্য প্রশিক্ষণ আর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কাজ করেন। ওই ছাত্রীর ক্ষেত্রেও প্রথমে এখানে ময়না-তদন্ত করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু দেখা যায় বিষয়টি জটিল। ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় কাকদ্বীপ হাসপাতালেরও দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘এটা আপেক্ষিক বিষয়। কোন দেহের কোথায় ময়না-তদন্ত হবে তা ঠিক করা আক্ষরিক অর্থেই বেশ জটিল। তেমন জটিলতা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়। তাই ওই দেহটি ডায়মন্ড হারবারে এনেই ময়না-তদন্তের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’

শীলপাড়ায় মামারবাড়িতে থাকত দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীটি। সোমবার সকালে ছাত্রীটি সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হয়। কিন্তু আর ফেরেনি। মঙ্গলবার সকালে তার ঝুলন্ত দেহ মেলে। মেয়েটির সঙ্গে সঙ্গে বামুনখালির কলেজ ছাত্র শুভদীপ প্রধানের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। শীলপাড়ায় শুভদীপের মামাবাড়ি। শুভদীপ মেয়েটির মামাবাড়ির লোকজনকে জানিয়েছিল, মেয়েটিকে নিয়ে তারা গঙ্গাসাগরে বেড়াতে গিয়েছিল। ফিরিয়েও নিয়ে আসে। পরে মেয়েটির দেহ মেলে। শুভদীপ, তার চার মামা এবং তাঁদের ছেলে-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রীটির মা। কিন্তু যে মামলায় ময়না-তদন্ত জরুরি, তা দেরিতে কেন করা হল, সে প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই তুলেছেন ওই ছাত্রীর মামাবাড়ির লোকেরা। ছাত্রীর এক মামার ক্ষোভ, ‘‘পুলিশ এত দেরি করল কেন? কেন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ময়না-তদন্ত হবে না? দেহটি ডায়মন্ড হারবার থেকে আনার ক্ষেত্রে তো অনেক গাড়ি ভাড়া দিতে হবে আমাদের।’’

ছাত্রীটিকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে মঙ্গলবার রাতেই পুলিশ মূল অভিযুক্ত শুভদীপের মামা বলাই সর্দার, মামাতো ভাই অসিত সর্দার এবং শুভদীপের বন্ধু, কলেজ পড়ুয়া শুভ দাসকে গ্রেফতার করে। মেয়েটিকে মোটরবাইকে করে গঙ্গাসাগর নিয়ে যাওয়ার সময় শুভ ছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। পুলিশ জানায়, ঢোলাহাটের রামগোপালপুর এলাকায় শুভ লুকিয়ে ছিল। বলাই সাগরেই ছিল। অসিতকে মঙ্গলবারই আটক করা হয়েছিল। ধৃতদের বুধবার কাকদ্বীপের বিশেষ ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের ৫ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপহরণ, নাবালিকা ধর্ষণ এবং খুনের মামলা রুজু হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement