ক্রেতার দেখা নেই, বারাসতের বাজারে রবিবার। নিজস্ব চিত্র
কাল দোল। ইতিমধ্যে বাজার ভরেছে রং-আবিরে। সঙ্গে রয়েছে মুখোশ, পিচকিরি-সহ রং খেলার আানুষঙ্গিক জিনিস। কিন্তু এ বার বিক্রি অন্যান্য বছরের তুলনায় কম, এমনটাই জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের দাবি, ঘরে ঘরে ছোটদের জ্বর-সর্দির প্রকোপে কোপ পড়েছে বিক্রিতে। আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করেছেন তাঁরা।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ফি বছর এ সময় জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ বাড়ে। তবে, চলতি মরসুমে শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বিগত বছরগুলির তুলনায় অনেকটাই বেশি। সঙ্গে জুড়েছে অ্যাডিনোভাইরাসের প্রকোপ। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন ব্লকে শিশুদের সুস্থ রাখতে সচেতনতা প্রচার করছে প্রশাসন। বাচ্চাদের ভিড়ে মেলামেশা করাতে বারণ করছেন চিকিৎসকেরা।
বারাসত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘ঠান্ডা-গরমের ভারসাম্যহীনতার জন্য শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সাবধানতার জন্য রং খেলা থেকে বিরত থাকা শিশুদের জন্য ভালই হবে।’’
গত সাত দিনে জেলায় রোজই জ্বর-সর্দি-শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে শিশুর মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। উত্তরে এখন আক্রান্তের সংখ্যা একশোর বেশি। বারাসত-১, দেগঙ্গা ও আমডাঙা ব্লকে শিশুদের সর্দি-কাশিতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ায় সচেতন হয়েছেন বাবা-মায়েরা। ফলে, অনেকেই ছেলেমেয়েদের দোল খেলতে দেবেন না এবং নিজেরাও খেলবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বারাসত-১, দেগঙ্গা ও আমডাঙা ব্লকের বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় দোল উপলক্ষে রং-পিচকিরি, মুখোশ বিক্রির জন্য অস্থায়ী দোকান দিয়েছেন অনেকেই। স্টেশনারি ও মুদি দোকানিরাও লাভের আশায় রং-আবির এনেছেন। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গতবারের তুলনায় এ বছর আবিরের বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে ৫০০-৭০০টাকা। আবির বিক্রি করতে হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। বিক্রি ভাল না হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
দত্তপুকুরের ব্যবসায়ী রবীন সাহা বলেন, ‘‘দাম বাড়ায় ক্রেতারা রং-আবির পরিমাণে কম কিনছেন। তবে রং-আবির কিছুটা বিক্রি হলেও পিচকিরি-সহ বাচ্চাদের রং খেলার খেলনা বিক্রি হচ্ছে না বললেই চলে।’’ রবিবার নীলগঞ্জের ব্যবসায়ী স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘দশ হাজার টাকার আবির-রং ও খেলনা কিনেছি বিক্রির জন্য। এখনও ৫০০ টাকার মালও বিক্রি হয়নি। হাতে আর একটা দিন। কতটাই বা বিক্রি হবে! অনেক টাকার লোকসান হয়ে গেল।’’
কদম্বগাছির বাসিন্দা শঙ্কর দত্তের পরিবারে তিনটি শিশু আছে। সকলের বয়স দশের নীচে। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছর হাজার টাকার রং-আবির ও খেলনা কিনি। চার ভাইয়ের পরিবার ছাড়াও বন্ধুরা মিলে রং খেলি। বাচ্চাদের কথা ভেবে এ বার দোল না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে কপালে আবির ছোঁয়াব। দোল খেলার চেয়ে সুস্থ থাকা বেশি জরুরি।’’