Aadhaar Support Camp

মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে খোলা হল ‘আধার সহায়তা ক্যাম্প’

যদিও বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর আশ্বাস দিয়েছেন, যাঁদের আধার নিষ্ক্রিয় হয়েছে, তাঁদের আধার আবার সক্রিয় করা হবে। এটি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত ত্রুটি।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:১৯
Share:

কাজ চলছে ক্যাম্পে। —নিজস্ব চিত্র।

মতুয়া অধ্যুষিত উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা বিধানসভায় অনেকে আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করার চিঠি পাচ্ছেন বলে জানা যাচ্ছে। হেলেঞ্চা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য রঞ্জিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘পুরাতন হেলেঞ্চা এলাকায় ৩২-৩৩ জনের আধার কার্ড বাতিল হওয়ার চিঠি এসেছে। সকলেই মতুয়া সমাজের।’’

Advertisement

এই ঘটনায় আতঙ্কিত মতুয়াদের অনেকে। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুরের দাবি, ‘‘বনগাঁ মহকুমায় এখনও পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার মতুয়া ভক্তের আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ার চিঠি এসেছে। আরও প্রায় ২৫ হাজার চিঠি পোস্ট অফিসে এসেছে। ধীরে ধীরে তা বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’’ মমতার কথায়, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের প্রায় ১০ লক্ষ মতুয়া ভক্তের আধার কার্ড বাতিল করার চক্রান্ত করেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।’’

যদিও বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর আশ্বাস দিয়েছেন, যাঁদের আধার নিষ্ক্রিয় হয়েছে, তাঁদের আধার আবার সক্রিয় করা হবে। এটি সম্পূর্ণ প্রযুক্তিগত ত্রুটি। শান্তনুর বক্তব্য, ‘‘যাঁদের আধার নিষ্ক্রিয় হয়েছে, তাঁদের একটি আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে।’’ এ জন্য তিনি একটি ই-মেল, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করেছেন। তাতে আবেদন করা যাবে।

Advertisement

মঙ্গলবার থেকে গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে শান্তনুর উদ্যোগে সাংসদ অফিসে আধার সহায়তা ক্যাম্প খোলা হয়েছে। যাঁদের আধার কার্ড বাতিল হয়েছে, তাঁরা ওই সহায়তা ক্যাম্পে এসে আবেদন করতে পারবেন। সাংসদ অফিস সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিন বিকেল পর্যন্ত প্রায় ২০০ মানুষ আবেদন করে গিয়েছেন। যদিও মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘এ সব ভাঁওতা। আধার যদি আবার সক্রিয় হবে, তা হলে নিষ্ক্রিয় করা হল কেন?’’

স্থানীয় অনেকে জানালেন, আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ার চিঠি পেয়ে তাঁরা শঙ্কিত। পাড়ায় বেরোতেও অস্বস্তি বোধ করছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে অনেকে চিঠি পেয়েও চেপে যাচ্ছেন বলে দাবি পঞ্চায়েত সদস্য রঞ্জিতের। অনেকের দাবি, ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারছেন না। রেশন তুলতে পারছেন না। এমনকী রান্নার গ্যাসের বুকিং পর্যন্ত করতে পারছেন না।

পুরাতন হেলেঞ্চার বাসিন্দা মহানন্দ বিশ্বাস চিঠি পেয়েছেন। জানালেন, আতঙ্কে রয়েছেন। মহানন্দের কথায়, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারছি না। সরকারি পরিষেবা পাচ্ছি না। কাজকর্ম সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে, মেরুদণ্ডটাই ভেঙে গিয়েছে!’’ তাঁর অভিযোগ, পরিচিত লোকজন অনেকে বিভিন্ন কথাবার্তা বলছেন। শিপ্রা দাস নামে এক মহিলার কথায়, ‘‘আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ার পর থেকে রেশন তুলতে পারছি না। লিঙ্কই হচ্ছে না। গ্যাস বুকিং করতে পারছি না। চিন্তায় আছি।’’ এক মহিলা জানালেন, আধার বাতিলের চিঠি পেয়েছেন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বৌমা অন্তঃসত্ত্বা। কয়েক দিন পর সন্তান হবে। তাঁরও কার্ড বাতিল হয়ে গিয়েছে। তিনি কান্নাকাটি জুড়েছেন। মহিলার কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমরা কী করে বাঁচব! আমরা ভোট দিয়ে সাংসদ-বিধায়ক করলাম। অথচ, এই পরিস্থিতি।’’

অনেক মতুয়াই মনে করছেন, আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় হওয়ার পরে এ বার তাঁরা বে-নাগরিক হয়ে যাবেন।

মমতা ঠাকুর বলেন, ‘‘আধার নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ঘুরিয়ে এনআরসি চালু করার পরিকল্পনা করেছে। বে-নাগরিক করার চক্রান্ত করা হচ্ছে মতুয়াদের। আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার ফলে মতুয়ারা ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারছেন না।’’ মমতার হুঁশিয়ারি, ‘‘এই চক্রান্ত বন্ধ না হলে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে আমরা আমরণ অনশন শুরু করব।’’

মতুয়াদের একাংশের দাবি, তাঁরা নাগরিকত্বের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সিএএ চালু করার। তা তো হচ্ছেই না, উলটে আধার নিষ্ক্রিয় করায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

বনগাঁ লোকসভা এলাকায় বহু মতুয়া মানুষের বসবাস। লোকসভা ভোটের আগে এই ঘটনায় বিজেপির স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশও বিব্রত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement