বিস্ফোরণস্থলে পড়ে রয়েছে একপাটি জুতো।মানিকতলা মেন রোডের লোহার কারখানায়। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
এলাকা জুড়ে ছাঁট লোহার একের পর এক গুদাম। সেই সব গুদামের সামনে রাখা বড় বড় লোহার ট্যাঙ্ক-সহ লোহার তৈরি বাতিল নানা জিনিস। ছাঁট লোহার ব্যবসার জন্য মানিকতলা মেন রোডের এই জায়গাটি পরিচিত ‘লোহা মার্কেট’ হিসাবে। সেখানে এমনই এক গুদামে জ্বালানি রাখার একটি বাতিল লোহার ট্যাঙ্ক গ্যাস কাটার দিয়ে কাটার সময়ে ট্যাঙ্কের ভিতরে বিস্ফোরণ ঘটায় মৃত্যু হল এক শ্রমিকের। বৃহস্পতিবার সকালের এই ঘটনায় ওই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত শ্রমিকের নাম পরশ রায় (৩৮)। তাঁর বাড়ি বিহারের বানিয়াপুরে। এখানে পরশ মানিকতলা থানা এলাকায় থাকতেন। শ্রমিক হিসাবেই কাজ করতেন তিনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ পরশ গ্যাস কাটার দিয়ে লোহার তৈরি বাতিল ওই পেট্রল ট্যাঙ্কটি কাটছিলেন। সেই সময়ে ওই ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের অভিঘাত এতটাই তীব্র ছিল যে, পরশ প্রায় ১৫ ফুট দূরে ছিটকে পড়েন। গুরুতর জখম ওই শ্রমিককে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় কোনও পক্ষের তরফেই থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে গোটা ঘটনার তদন্তে নেমেছে মানিকতলা থানার পুলিশ।
পুলিশ সূত্রের খবর, লোহার ওই বাতিল ট্যাঙ্কটি লোহা মার্কেটে নিয়ে এসেছিলেন বীরেন্দ্র জায়সওয়াল নামে এক ব্যক্তি। তবে, কী ভাবে বিস্ফোরণ ঘটল, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পেট্রল ট্যাঙ্কের উপরের ঢাকনাটি খোলা ছিল। পরশ গ্যাস কাটার দিয়ে ট্যাঙ্কটি কাটার সময়ে সম্ভবত রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ট্যাঙ্কের ভিতরে কোনও দাহ্য গ্যাস তৈরি হয়ে যায়। যার জেরে বিস্ফোরণ ঘটে। কিন্তু কী ভাবে ট্যাঙ্কের মধ্যে ওই জাতীয় গ্যাস তৈরি হল, তা স্পষ্ট নয় তদন্তকারীদের কাছে। তাই বিস্ফোরণের প্রকৃত কারণ জানতে ঘটনাস্থলের ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হবে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যে গুদামের পেট্রল ট্যাঙ্ক কাটতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেই গুদামটি বন্ধ। বিস্ফোরণস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাননি ওই লোহা মার্কেটের কেউই। ওই গুদাম কে চালান, এই প্রশ্ন করা হলে উত্তর এসেছে, ‘‘জানি না’’ অথবা ‘‘বলতে পারব না।’’ ওই ব্যবসা ক্ষেত্রের এক নিরাপত্তারক্ষী বললেন, ‘‘ঘটনার সময়ে আমি ছিলাম না। অন্য রক্ষী ডিউটিতে ছিলেন। এখানে বহু মানুষ ব্যবসা করেন। বহু লোকের আনাগোনা। সকলের নাম-পরিচয় জানি না।’’ ঘটনাস্থলে হাজির এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি বিস্ফোরণের সময়ে এখানে ছিলাম না। তবে শুনেছি, একটা বিকট আওয়াজ হয়েছিল। তার পরে সকলে বুঝতে পারেন যে, এখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে।’’