বিয়ের ছবিতে দম্পতি। ফাইল চিত্র।
অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুনের অভিযোগে ধৃত রিপন বিশ্বাসকে ছয় দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিলেন বিচারক। রবিবার ওই অভিযুক্তকে রানাঘাট আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ওই নির্দেশ দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার ভোরে গাংনাপুর থানার মাঝেরগ্রাম অনন্তপুর গ্রামে নিজের ঘরেই স্ত্রীর পেটে ধারালো অস্ত্র ঢুকিয়ে দেয় রিপন, এমনটাই অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। রিয়া বিশ্বাস নামের ওই জখম তরুণীকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি বলে শনিবারই দাবি করেছিলেন রিপনের বাবা গোবিন্দ বিশ্বাস। অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে খুনের অভিযোগ এনে শনিবারই তরুণীর বাবা নারায়ণ দাস জামাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে রিয়ার স্বামী রিপন ছাড়াও মেয়ের শ্বশুর গোবিন্দ বিশ্বাস এবং শাশুড়ি রিনা বিশ্বাসের বিরুদ্ধেও খুনের অভিযোগ রয়েছে। শনিবার মূল অভিযুক্ত রিপন বিশ্বাস গ্রেফতার হলেও রবিবার পর্যন্ত রিয়ার শ্বশুর-শাশুড়িকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অন্য দিকে, রিয়াকে যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছে বলে অভিযোগ, তা এখনও উদ্ধার করা যায়নি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীকে খুনের উদ্দেশ্য স্পষ্ট ভাবে জানতে এবং খুনে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রটি উদ্ধারের জন্য রবিবার আদালতে বিচারকের কাছে রিপনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। বিচারক ওই আবেদন মঞ্জুর করেন। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন আরও দুই অভিযুক্ত রিপনের বাবা-মায়ের খোঁজে যুবকের বাড়িতে যাওয়া হয়েছিল। তবে সেখানে রিপনের বাবা-মাকে পাওয়া যায়নি। ওই দু’জনের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও রিয়ার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই বছর আগে উত্তর চব্বিশ পরগনার বাসিন্দা রিয়া দাসের সঙ্গে রিপন বিশ্বাসের বিয়ে হয়েছিল। রিয়া বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন, এমনটাই জানিয়েছে তাঁর পরিবারের লোকেরা। শনিবার ভোরে জখম অবস্থায় রিয়াকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। সেখানেই মৃতদেহের ময়না-তদন্তের পরে শনিবার বিকালে উত্তর চব্বিশ পরগনার গোপালনগর থানার কামদেবপুরে তরুণীর বাপের বাড়িতে তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই রিয়ার দাহকাজ সম্পন্ন হয়।
রবিবার অনন্তপুরের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘শনিবারের ওই ঘটনার পর এলাকার মানুষ ফোনে রিপনের বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের ফোনে পাওয়া যায়নি। তাঁরা ওই দিন বাড়িতেও আর ফেরেননি।’’ যদিও শনিবার হাসপাতাল থেকে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির কাছে গোবিন্দ বিশ্বাস দাবি করেন, ভোরে পুত্রবধূর চিৎকারে তিনিই প্রথম ছেলে-বৌমার ঘরের জানলা দিয়ে ঢুকে রিয়াকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান এবং তাঁকে তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান।
ওই এলাকাবাসীর আরও দাবি, ‘‘বেশ কিছু দিন ধরেই রিপনকে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত বলে মনে হচ্ছিল। এখন বোঝা যাচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গণ্ডগোল চলছিল।’’