মৃত পবিত্র সরকার। — নিজস্ব চিত্র।
জাতীয় সড়কে গাছ কাটা নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই ফের যশোর রোডের পাশে থাকা গাছের ডাল ভেঙে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির।
বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে গাইঘাটা বাজার এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম পবিত্র সরকার (৪২)। বাড়ি স্থানীয় উত্তর বাগনা এলাকায়। সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। আচমকাই গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। জখম হন পবিত্র। হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। রাতে মারা যান।
এই ঘটনার পরে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা গাছ ও ডাল কাটার দাবিতে যশোর রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে কোনও ঝড়বৃষ্টি হয়নি। তা সত্ত্বেও ডাল ভেঙে পড়েছে। এই ধরনের গাছগুলি মৃতপ্রায়, ডাল ধরে রাখতে পারছে না। তাঁদের অভিযোগ, বার বার দুর্ঘটনার পরেও প্রশাসন উদাসীন।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন, সুপ্রিম কোর্ট ৫টি রেলসেতু তৈরির জন্য ৩৫৬টি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছে। সে ক্ষেত্রে মরা, বিপজ্জনক গাছ কাটতে সমস্যা কোথায়? এক যুবক বলেন, ‘‘সরকার পদক্ষেপ না করলে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে এ বার আমরাই বিপজ্জনক ডাল কেটে ফেলব।’’
গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় প্রতি দিন হাজার হাজার যানবাহন যাতায়াত করে। সাম্প্রতিক সময়ে যশোর রোডে গাছের ডাল ভেঙে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। জখম হয়েছেন অনেকে। মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। গত বছর গাইঘাটার চাঁদপাড়া এলাকায় গাছের ডাল ভেঙে একটি মুরগির দোকানে পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। একই এলাকায় ডাল ভেঙে অনেকে জখম হন।
পবিত্র গাইঘাটা বাজার এলাকায় একটি মুরগির দোকানে কাজ করতেন। দুই ছেলেমেয়ে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাঁর দাদা দেবব্রত বলেন, ‘‘আমরা চাই, সরকার ভাইয়ের ছেলেকে আর্থিক সাহায্য ও কাজের ব্যবস্থা করে দিক। পাশাপাশি, মরা গাছগুলি দ্রুত কেটে ফেলা হোক।’’
গাইঘাটার বাসিন্দা, বাম যুব নেতা অভিষেক ভৌমিক বলেন, ‘‘প্রত্যেক বারই ডাল ভেঙে মৃত্যু বা জখমের ঘটনার পরে মানুষ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। তারপরে দু’একদিন গাছের মরা ডাল কাটা হয়। তারপর আবার সব থেমে যায়। বিপদ মাথায় করে যাতায়াত করতে বাধ্য হন এলাকার মানুষ।’’ তাঁর দাবি, এখনও গাইঘাটা বাজার এলাকায় বেশি কিছু বিপজ্জনক ডাল ঝুলে রয়েছে। সেগুলি অবিলম্বে কাটতে হবে। নিয়মিত এই কাজ চালিয়ে যাওয়া দরকার।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের বনগাঁ মহকুমার সহকারী বাস্তুকার স্নেহাশিস সিকদার জানান, যশোর রোডে নিয়মিত গাছের মরা, বিপজ্জনক ডাল কাটা হয়। কিন্তু সমস্যা হল, অনেক সময়ে কোনও এলাকায় একটি গাছের ডাল কাটার কাজ শেষ হতে না হতেই ওই গাছেরই অন্য ডাল শুকিয়ে যাচ্ছে। সেগুলি ফের শনাক্ত করে কাটার আগেই দুর্ঘটনা ঘটছে।
তিনি বলেন, ‘‘অনেক গাছের জীবন ফুরিয়ে এসেছে। সেই সব গাছের ডাল বার বার শুকিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে গাছগুলি কেটে ফেলতে না পারলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।’’ বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে চিঠি দিয়ে গাছ কাটার আবেদন করলে মরা গাছ কাটতে পদক্ষেপ করা হবে।’’